Header Ads

অপহরণ

ফটোকপির দোকানে বসে আছে হাফিজ
।ইরিনার জন্য নোটগুলো ফটোকপি করা
লাগবে ।আলাদা ডিপার্টমেন্টের হলেও
কিছু কমন কোর্স আছে ওদের ।ইরিনার
জন্য হাফিজের এরকম দরদ উথলাতে
দেখে আড়ালে আবডালে সহপাঠীরা কম
কথা বলে না ।তবে ওরা শুধুই বন্ধু । খুব
ভালো বন্ধু ।ইরিনার বয়ফ্রেন্ড
সিয়ামের সাথেও একবার দেখা হয়েছে
হাফিজের । কাজেই ক্লাসমেটদের
কানাঘুষোতে কান দেয়ার কোন মানে হয়
না ।দীর্ঘ আধঘন্টা পর যখন দোকানটা
থেকে নোটের ফটোকপি নিয়ে বের হয়
হাফিজ – বিরক্তিতে ভ্রুজোড়া কুঁচকে
আছে ওর ।ফোন দেয় ইরিনাকে, ‘কই রে
তুই ??’
‘আমি আর কই থাকব দোস্ত । হল-এ ।’
ইরিনার জবাবে হাফিজের রাগ আরও এক
ডিগ্রী বাড়ে এবার ।
‘হলে কারেন্ট আছে ?’ জানতে চায় ও ।
‘হ্যাঁ । কেন রে ?’ ইরিনা একটা হাই
চাপে বলে মনে হয় হাফিজের ।
‘মাথার ওপর ফ্যান চলে ?’ আবার জানতে
চায় হাফিজ ।
‘এই গরমে কি ফ্যান বন্ধ করে রাখব
নাকি ?’ অবাক হওয়ার ভান করে ইরিনা ।
‘তুই এবার ওই ফ্যানটা বন্ধ করে বাইর হ ।
আজ তোর একদিন কি আমার একদিন ।’ গড়
গড় করে হাফিজ রাগে ।
‘অ্যাই – বিকালে দেখা করি তোর
সাথে ?’ ঘুম ঘুম ভাবটা অনেকটাই গেছে
ইরিনার মুখ থেকে । ‘সিয়াম অপেক্ষা
করছে আমার জন্য ।’
চমৎকার – মনে মনে ভাবে হাফিজ ।
ইরিনার জন্য আধঘন্টা গরমে সিদ্ধ হয়ে
ফটোকপি করে দিল ও – আর এখন
মেয়েটা যাবে ডেটিং-এ ।ভালো তো !
ইরিনাকে আর বলে না ও ফটোকপির কথা
। বিকাল হলেই দেয়া যাবে ।ব্যাগে
নোটটা ভরে একটা অটো থামায় হাফিজ
।পদ্মার তীরে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ
বসে থাকতে ইচ্ছে করছে ।ইরিনাটা
এমনই ।

সিগারেটের গোড়াটা পানিতে ফেলে
দেয় হাফিজ ।এই নিয়ে তিনটা গেল ।
যদিও ওর কাজটা ঠিক হচ্ছে না –
ইরিনাকে মাথা থেকে সরাতে পারে
না ।ওরা আলাদা ডিপার্টমেন্টের
স্টুডেন্ট – কাজেই রোজ দেখা হওয়ার
সম্ভাবনা নেই তেমন ।তবুও ইরিনাকে
রোজ একবার করে না দেখলে ভালো
লাগে না হাফিজের ।এক মাস আগে
ইরিনার রিলেশনের পর থেকে নিজেকে
অপরাধী মন হয় ওর ।মেয়েটার প্রতি ও
দুর্বল এটা ও নিজেও জানত । চেয়েছিল
আর কয়টা দিন পরে বলতে ।তা আর হল
কই ?কাছের বন্ধু ফুয়াদকে ফোন দেয় ও ।
‘দোস্ত, বাইর হতে পারবি ?’
‘আসছি । কই তুই ?’
লোকেশন জানিয়ে দিয়ে ফোন কাটে ও
।পনের মিনিটের মাথায় হাজির ফুয়াদ
।বাইকটাকে দাঁড় করিয়ে ওর পাশে এসে
বসে ।‘কয়নম্বর ?’ হাতের সিগারেটটার
দিকে ইশারা দিয়ে বলে ফুয়াদ ।
‘পাঁচ ।’ বিমর্ষ মুখে আরেকটান দেয়
হাফিজ ।
‘মেয়েটা কোথায় পড়ে ?’ সিগারেটের
সংখ্যার সাথে মিলিয়ে পরিস্থিতি
বুঝে একেবারে আসল প্রশ্নে চলে আসে ও

‘ওর নাম ইরিনা । আমাদের
ইউনিভার্সিটিতেই ।’ নদীর দিক থেকে
চোখ সরায় না ও ।
‘ও । সমস্যা কোথায় ? আরেকজনকে পছন্দ
করে ?’
‘উঁহু । আরেকজনের সাথে প্রেম করে ।’
আরও দূরে তাকায় এবার ।
‘ওহ । বিশাল সমস্যা । ছেলেও কি একই
ব্যাচের তোদের ভার্সিটির ?’
‘না । তোদের ভার্সিটির । সিনিয়র ।
দুই বছরের ।’ সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে
হাফিজ যতদূরে পারে ।
‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ?’ অবাক হয়
ফুয়াদ । ‘কোন ডিপার্টমেন্ট ?’
‘ফিলোসফি ।’
‘আচ্ছা ।’ চুপচাপ হয়ে যায় ফুয়াদ । মাথায়
কিছু একটা ঘুরে ওর ।
‘দোস্ত – ওরে আউট করে দেই ?’ কুটিল
গলায় বলে ফুয়াদ । ‘ফিলোসফির ভাইয়া
কয়েকজনকে চিনি । দেখি ছেলের কোন
লুইচ্চামি প্রবলেম আছে কি না । পরে
ওটা দিয়েই ক্যারফা লাগিয়ে দিব ।
এসব কাজে আমার ওপর ভরসা রাখ । দুই
সপ্তাহের মধ্যে ইরিনা হয়ে যাবে তোর
।’
‘না, দোস্ত ।’ সরাসরি ফুয়াদের দিকে
তাকায় হাফিজ । ‘আমার লাভ দেখতে
ভালো লাগে । মেয়েটা আমার না হোক
। কারও সাথে সুখে থাকুক অন্তত ।’
একমুহূর্ত ওর দিকে তাকিয়ে
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ফুয়াদ । ‘আরে
আমার নীতিবান প্রেমিক রে ! দাঁড়া
না ! অন্তত ওর বয়ফ্রেন্ডটা সম্পর্কে ফোন
দিতে তো সমস্যা নাই তাই না ? আমার
ক্লোজ বড় ভাই আছে ফিলোসফির ।’
‘ক্যারফা’ লাগানোর ইচ্ছেটা যায়নি
আরকি এখনও !'
করুণ দৃষ্টিতে ওর দিকে আকায় হাফিজ ।
আবার বলে ফুয়াদ, ‘দ্যাখ – ওই ভাইয়ের
কোন প্রবলেম থাকলে সেটা জানা তো
দরকার । পরে মেয়েটার ক্ষতি হতেও
পারে তাই না ? ভাইয়ের নাম কি ?’
‘সিয়াম ।’
‘দুই মিনিট দে – দেখতেছি ।’ মোবাইল
বের করে ফুয়াদ ।‘হ্যালো জমির ভাই ।
আমি ফুয়াদ ।’ওপাশের কথা শুনে বলে ও
আবার, ‘জ্বী ভাই ভালোই চলছে । ভাই
একটা ব্যাপার ।’ ... ‘আমার কাজিন তো
আপনাদের ব্যাচমেটের সাথে রিলেশন
করে বসে আছে । বাসায় জেনে একাকার
অবস্থা । আন্টি আমারে ধরছে ভাইয়ের
ডিটেইলস জানতে । তাই আপনাকে ফোন
দিলাম । আপনি চিনবেন – আপনারই
ডিপার্টমেন্টের । সিয়াম ভাই ।’... ‘জ্বী
ভাই ?’ওপাশের কথা শুনে আবার বলে,
‘ভালো নাম তো ভাই জানি না ।’‘আচ্ছা
ভাই জানাচ্ছি আপনাকে ।’ফোন কেটে
আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়
ফুয়াদ ।ওর পরের কথাটা শুনে দুইবার
হার্টবীট মিস করি আমি ।‘সিয়াম নামে
কোন ছেলেই ফিলোসফিতে পড়ে না ।’

ইরিনাকে সতেরবারের মত ফোন দেয়
হাফিজ ।একবারও ধরছে না ।‘বিজি
ডেটিং’-এ আছে সম্ভবতঃ ।
‘দোস্ত আজ বিকালে না দেখা করবে
বললি ?’ ওর অস্থিরতা কাটাতে বলে
ফুয়াদ । ‘তখনই নাহয় ওকে সব জানাস ।’
‘আমরা জানি না কার সাথে আছে ও,
ফুয়াদ ।’ হাফিজ তীব্রদৃষ্টিতে তাকায়
তার দিকে । ‘শুধুই একজন সুবিধেবাদী,
নাকি কোন ক্রিমিনাল – ইরিনাকে
নিয়ে যে নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্যে
খেলছে ! ’
এবার ফোন করতে প্রথম রিং-এই ধরে
ইরিনা ।‘কি রে তুই !’ হুংকার দেয় ওপাশ
থেকে ও, ‘বলি নাই আমি সিয়ামের
সাথে ! এতবার ফোন দিস কেন ?
বলেছিলাম না বিকালে দেখা করব ?’
‘দোস্ত তুই কই ?’ কানে ফোন চেপে ধরে
হাফিজ । ‘জাস্ট বল আমাকে তুই এখন
কোথায় ?’
‘কেন ? চলে আসবি নাকি ?’ শ্লেষের
সাথে বলে ইরিনা । মেজাজটা ওর
ভালো নেই । ‘তোকে বিকালে ফোন
দেব ।’
ফোন কেটে দেয়ার উপক্রম করে ইরিনা ।
মরিয়া হয়ে ওঠে হাফিজ, ‘সিয়াম ভাই
রাবিতে পড়ে না । তোকে আগাগোড়া
মিথ্যে বলেছে ও । কোথায় তুই ! ড্যাম
ইট ! ’
এক সেকেন্ড থমকে যায় ইরিনা ।‘ফায়ার
সার্ভিসের এখানে । পদ্মার পাড়ে ।’
আস্তে করে বলে ফোনটা কেটে দেয়
মেয়েটা ।
‘ফুয়াদ, বাইক স্টার্ট দে ।’ ব্যাস্ত হয়ে
বলে হাফিজ, ‘কুইক !’তীরবেগে ছুটে চলে
বাইক ।ছোট্ট এই রাস্তাটাকে আজ
হাফিজের মনে কয়েকশ মাইল লম্বা ।
ফায়ার সার্ভিসের মোড়টা পার হতেই
বাম দিকের রাস্তায় অনেক দূর থেকে
ওদেরকে দেখতে পায় হাফিজ ।ইরিনা
অবসন্নের মত সিয়ামের বুকে এলিয়ে
আছে । ওভাবেই হাঁটিয়ে নিয়ে একটা
গাড়িতে প্রায় তুলে ফেলেছে ওকে
সিয়াম ।দ্রুত হিসেব কষে হাফিজ।
এখান থেকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে
পৌঁছতে উঠে তো পড়বেই ওরা গাড়িতে
– সেই সাথে ওদের দেখে ফেলে
ম্যানিয়াকটা ইরিনার কি ক্ষতি করে
ফেলে এই ভয়ে ও টোকা দেয় ফুয়াদের
কাঁধে ।‘দোস্ত –থামিস না – রাস্তা
ধরে এগিয়ে যা ।’
আস্তে করে নির্দেশনা দেয় হাফিজ ।
কথামত এগিয়ে যায় ফুয়াদ ।‘ওটা ইরিনা
ছিল না ?’ সাইডরোডে বাইক ঘুরিয়ে
ওদের গাড়িটার বের হওয়ার অপেক্ষা
করতে করতে বলে ফুয়াদ ।
‘হুঁ ।’ মাথা ঝাঁকায় হাফিজ ,’ভেবে
দেখলাম সময়মত পৌঁছতে পারব না ।
ফলো করতে হবে ।’
‘মেয়েটা কিউট ।’ এই চরম মুহূর্তেও
ভদ্রতা ভুলে না ফুয়াদ !
‘থ্যাংকস দোস্ত ।’ হাফিজ আর কি বলবে
ভেবে পায় না ।
গলিটা থেকে গাড়িটা বেরিয়ে আসতে
একটু অপেক্ষা করে ফুয়াদ । তারপর বাইক
ছোটায় ।‘আমার পিছে মুখ লুকিয়ে রাখ
।’ হাফিজকে বলে ও, ‘আমাকে দেখে
ফেললেও সমস্যা নাই । তোকে দেখলে
বুঝে ফেলবে ফলো করছি আমরা
।’গাড়িটা ছুটে চলে মাঝারি গতিতে ।
যথেষ্ট দূরত্ব রেখে প্রায় আধঘন্টা ফলো
করার পর মেইন রোড থেকে নেমে যায়
গাড়িটা ।মেইনরোডেই বাইক থামিয়ে
ফেলে ফুয়াদ ।‘দোস্ত, এবার বুঝে
ফেলবে ঢুকলে ।’ হাফিজের দিকে
অসহায় দৃষ্টি দেয় ফুয়াদ ।
‘ডোন্ট লুজ দেম ।’ থাবা দেয় হাফিজ
ফুয়াদের পিঠে । ‘নাচতে নেমে উঠান
বাঁকা করা যাবে না ।’
আবার স্টার্ট দেয় বাইক বেচারা ।আরও
পাঁচ মিনিট পর দোতলা বাসাটার সামনে
গাড়িটা থেমে যেতে দেখে ওরা ।বেশ
বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে আগের বাম দিকের
মোড়ে বাইক নিয়ে ঢুকে পড়ে ফুয়াদ ।এই
রাস্তার শেষ মাথায় থেমে গেল ওরাও
।‘নাউ হোয়াট ?’ ফুয়াদের প্রশ্ন ।
কাঁধের ব্যাগটা ফুয়াদের পিঠে
চাপিয়ে লাফিয়ে বাইক থেকে নেমে
পড়ে হাফিজ ।‘তুই পুলিশ নিয়ে আয় ।
আমি বাসাটায় ঢুকছি ।’
ওর দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে
ফুয়াদ ।‘এই সিয়ামকে আমার
প্রোফেশনাল ক্রিমিনাল মনে হচ্ছে ।
তুই একা যাবি ?’
‘এখন আমি ফুটবল টীম কই পাব ?’ পালটা
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় হাফিজ ।
‘পুলিশকে কি বলব ?’
‘কিডন্যাপ কেইস । ইরিনা যেভাবে
অচেতনের মত হাঁটছিল আমার মনে হয়
ড্রাগ দেওয়া হয়েছে ওকে ।’ শার্টের
হাতা গুটায় হাফিজ । ‘দেরী না করে ছুট
লাগা ।’
মটরসাইকেলটা রাস্তার ওপাশে অদৃশ্য
হয়ে যেতেই পেছন থেকে দোতলা
বিল্ডিংটা পর্যবেক্ষণ করে হাফিজ ।
সদর দরজা দিয়ে ঢুকে গেলে মাথা
হারানোর সম্ভাবনা শতভাগ ।কাজেই
বিল্ডিংটায় ঢোকার বিকল্প পথ খোঁজে
হাফিজের চোখ ।পেছনের পানির
পাইপটাকে বেশ পছন্দ হয় ওর । ওটা আর
বারান্দার গ্রিলের সহায়তায় ছাদ
পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে ওদিক দিয়ে
ঢোকা যেতে পারে ।লম্বা করে শ্বাস
টেনে এগিয়ে যায় হাফিজ ।

হাঁচড়ে পাঁচড়ে ছাদে উঠে পড়ে অবশেষে
ও ।ছাদের দরজাটা খোলা পাওয়ায়
নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় হাফিজ ।
সাবধানে এক পা এক পা করে সিঁড়ি
বেয়ে নামতে থাকে ও ।দোতলায় রাখা
হয়েছে ইরিনাকে ?না নীচতলায় ?
দোতলা থেকে শুরু করতে চায় হাফিজ ।
আস্তে করে ধাক্কা দিতেই দরজাটা
খুলে যায় ।ভেতরের আরেকটা দরজায়
তালা দিয়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়ায় সিয়াম
।ক্ষুব্ধ একটা চিৎকার দিয়ে ওর ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়ে হাফিজ ।হাফিজকে
এখানে আশা করেনি সিয়াম – চমকে
ওঠার সুযোগটাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগায়
হাফিজ ।পর পর ছয়টা ঘুষিতে মাটিতে
ফেলে দেয় ওকে ।ওর ওপর উঠে মুখে
আরেকটা ঘুষি বসিয়ে হিস হিস করে
ওঠে, ‘চাবি দে হারামজাদা ।’মাথার
পিছনে ভীষণ জোরে কিছু একটা আঘাত
হানে এই সময় ।ঝট করে সিলিং এর
দিকে চলে যায় হাফিজের দৃষ্টি ।
তারপরই সব অন্ধকার ।
*
ঘরের মাঝখানে একটা পোল ।তাতে
হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় চোখ
মেলে হাফিজ ।একটা খাট, একটা
টেবিল আর একটা চেয়ার ছাড়া কিছু
নেই হতচ্ছাড়া এই ঘরে ।হাতটা একটু
নড়াতেই কারও নরম হাতের ছোঁয়া পায়
সেটা ।‘জ্ঞান ফিরেছে তোর ?’ পিছন
থেকে ইরিনার গলা শুনতে পায় হাফিজ

‘তুই আমার মতই বাঁধা নাকি ?’ অযৌক্তিক
প্রশ্নটা করেই স্বান্তনা দেয় ওকে,
‘ভাবিস না । পুলিশ আসছে । ফুয়াদকে
পাঠিয়েছিলাম ।’
‘উঁহু’, হতাশ কন্ঠে বলে ইরিনা । ‘আমরা ওই
বাসাতে নেই তো আর । আমাকে
তড়িঘড়ি করে বের করে আনে ওরা ।
তোকে দেখলাম বাইরের রুমে হাত পা
বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিলি । ওখান
থেকে আবার গাড়িতে করে আরেকটা
বাসায় নিয়ে এসেছে ।’
‘চমৎকার !’ আর কিছু খুঁজে পায় না বলার ।
‘তোকে ধরেছে কেন জানিস কিছু ?’
‘টাকার জন্য ।’ বিষন্ন গলায় বলে
মেয়েটা । ‘বাবার ব্যাপারে খোঁজ
নিয়েই এসেছে ওরা ।’
‘জানলি কিভাবে ?’
‘তুই অজ্ঞান ছিলি – এসময় আমাকে
জানিয়ে গেছে । বারো ঘন্টার মাঝে
টাকা না পেলে -’ চুপ হয়ে যায় মেয়েটা

বুঝতে পারে হাফিজ । যতটুকু পারা যায়
ওর হাত ছুঁয়ে স্বান্তনা দেয় ওকে, ‘যতক্ষণ
বেঁচে আছি – তোকে কেউ ছুঁতে পারবে
না, ইরিনা । ধরা পড়লি কি করে ?
এতদিন তো ধরে নি ।’
‘তুই ফোনে যখন বললি যে ও রাবিতে
পড়ে না – ফোন কেটে ওকে চার্জ
করলাম । শয়তানটা বুঝে ফেলে সব নাটক
শেষ । তাই তখনই একটা সিরিঞ্জ বের
করে -’ কথা শেষ করতে পারে না ও ।
দড়াম করে দরজা খুলে যায় হঠাৎ
।‘সিয়াম’ দাঁড়িয়ে ওখানে ।নাকে আর
গালে কয়েকটা ছোট ছোট স্টিচ
।‘হিরোর জ্ঞান ফিরেছে দেখছি ।’
খনখনে গলায় হাসে কিডন্যাপার ।
‘তোমার বাবার পকেটে মালপানি কিছু
আছে না ফকফকা ?’চুপ করে থাকে
হাফিজ ।‘মাইয়ার বাপে তো দেড়
কোটি দিচ্ছে । তোমার বাপে এর
অর্ধেক দেয়ার মুরোদ রাখে তো ?’এবারও
চুপ থাকে হাফিজ ।‘যোগাযোগ করা
হয়েছে । কি উত্তর পাব তার উপরে
তোমার ভাগ্য নির্ভর করছে । আমি অবশ্য
চাই উত্তরটা “না” হোক । তোমার
ক্ষেত্রে ছুরির ব্যাবহার দেখাব আমি ।’
চোখ ধক ধক করে জ্বলে সিয়ামের ।
হাফিজের মুখে দুটো ঘুষি মারে পর পর ।
নাক থেকে এক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ে
ওর । ‘ফকিরনীর পোলা হয়ে বড়লোকের
মাইয়ার পেছনে পেছনে দৌড়াইলে
পরিণতি এই হয় । আফসোস ! শিক্ষাটা
জীবনে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছ
না ।’বিশাল রসিকতা করে ফেলেছে
এভাবে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে
বেড়িয়ে যেতে থাকে সিয়াম ।দরজায়
দাঁড়িয়ে আরেকবার ঘুরে দাঁড়ায়
।‘তোমার জন্য সুখবর – মেয়ের বাবা আর
আট ঘন্টার মাঝে টাকা না দিলে
তোমাকে ফ্রি-তে শো দেখানো হবে ।’
হাত দিয়ে অশ্লীল একটা ইংগিত করে
ছোকড়া । চোয়াল শক্ত হয়ে থাকে
হাফিজের ।তারপর দড়াম করে লাগিয়ে
দেয় দরজা ।সোজা হয়ে বসার চেষ্টা
করে হাফিজ ।‘আউ আউ’ জাতীয় শব্দ করে
ইরিনা পেছনে । বেচারি হাতে ব্যাথা
পাচ্ছে ।আলাদা আলাদা করে বাঁধলেও
ওদের হাত দুটো খুব কাছাকাছি ।
নড়াচড়ার উপায় কমে গেছে আরও
।‘হাফিজ ।’
গলা নামিয়ে ডাকে ইরিনা ওকে ।
সুরটা চেনে হাফিজ । অসহায়ত্ব ।‘সাহস
হারাইস না ।’
‘আমাকে বের করে নিয়ে যা প্লিজ ।’
ফুঁপিয়ে ওঠে মেয়েটা ।
মাথা সোজা করে পোলে ঠেকায়
হাফিজ । ‘আমি তোকে বের করে নিয়ে
যাব ।’
সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করে ও আবার
।‘ওই ! আমি হাতে ব্যাথা পাই ।
মুলামুলি করতেছিস কেন ?’ পেছন থেকে
কাঁদতে কাঁদতেই ধমক দেয় ইরিনা ।
‘ইরি, আস্তে করে উঠার চেষ্টা কর ।
দাঁড়াতে হবে আমাদের দুইজনকেই ।’
আবারও চেষ্টা করে হাফিজ ।
‘দাঁড়িয়ে কি হবে ?’ কান্না থামানোর
চেষ্টা করতে করতে বলে ইরিনা ।
‘পকেটে মানিব্যাগটা রেখে দিয়েছে
ওরা । ওটা বের করা লাগবে ।’
‘ট্যাক্সি ভাড়া দিবি ?’ রেগে যায়
মেয়েটা । ‘পালানোর চিন্তা কর
মানিব্যাগের চিন্তা ফেলে ।’
‘ট্যাক্সি ভাড়া দেব না । তোকে বের
করে নিয়ে যাব ।’
আবার চেষ্টা করে হাফিজ । এবার
ইরিনাও দাঁড়াতে চায় আস্তে আস্তে
।‘কিভাবে ?’ হাঁটু ভাজ করে একটু একটু
করে দাঁড়াতে দাঁড়াতে প্রশ্ন করে
ইরিনা ।
‘তোর হাত কাজে লাগিয়ে । মানিব্যাগ
পর্যন্ত আমার হাত যাবে না । তোর হাত
যাবে । আস্তে করে বের করবি ।’ পুরো
দাঁড়িয়ে গেছে ওরা । ‘এখন চেষ্টা কর ।
আমার বাম পকেটে ।’
হাতড়ে হাতড়ে ওর পকেট বের করে
মেয়েটা । ‘আমার মাত্র দুই আঙ্গুল
নড়াতে পারছি রে ।’
‘চলবে ।’ খুশি হয় হাফিজ । ‘তুই বের করে
আমার হাতে পাস করে দিবি । বাকিটা
আমি দেখছি ।’
‘কিন্তু আছেটা কি ঘোড়ার ডিম তোর
মানিব্যাগে ?’
আঙ্গুলে পেয়ে গেছে মানিব্যাগটা ।
টেনে বের করে আনছে এখন ইরিনা ।
আস্তে করে হাফিজের হাতে তুলে দেয়
মানিব্যাগটা ।ছোট্ট পকেটটায় আঙ্গুল
ঢুকিয়ে খুশি হয়ে ওঠে হাফিজের মনটা
। আছে !‘৩ টাকা দামের একটা ব্লেড ।’
সগর্বে জানায় হাফিজ এবার ।
‘দেড় কোটি ভার্সেস তিন টাকা ।’
মুক্তির আশায় ঝরঝরে হয়ে গেছে
মেয়েটার মন, ‘কে জিতবে, হুম ?’
‘এক্ষেত্রে – তিনটাকা ।’ ব্লেডটা বের
করে মানিব্যাগ ফেলে দেয় হাফিজ ।
আস্তে করে আঙ্গুল বাঁকা করে দড়ি
পর্যন্ত আনার চেষ্টা করে, ‘কারণ এর ধার
বেশি ।’
‘জিতাতে পারলে যা চাইবি তাই পাবি
।’ হাসিমুখে বলে ইরিনা ।
‘মনে থাকে যেন ।’
দড়ি কাটার ফাঁকে বলে হাফিজ ।শুনতে
সহজ মনে হলেও দুই হাত বাঁধা থাকা
অবস্থায় কব্জিতে আটকে থাকা দড়ি শুধু
আঙ্গুল ব্যাবহার করে কাটার চেষ্টা করা
কতটা কঠিন সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে
পারে হাফিজ । দড়ির চেয়ে বেশি
কাটছে হাত । আঙ্গুল ফালা ফালা হয়ে
যাচ্ছে ওর দ্বিমুখী ব্লেডে ।এই সময়
দরজার ওপাশে কারও রাগত গলা শোনা
যায় কারও ।‘মাগীর বাপে পুলিশে খবর
দিছে না ! একটা মাগীর লগে ক্যামনে
ব্যাবহার করতে হয় বোঝায়া দিব এবার ।
দরজা খোল, রুস্তম । ভাবিস না তোরেও
চান্স দিমু নে । আধা ঘন্টা পর শুধুই
তোদের ।’
আতংকে কেঁপে ওঠে ইরিনা ।দড়াম করে
দরজা খুলে যায় আবার ।ধারালো চাকু
হাতে সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে । দড়ি
কেটে ইরিনাকে সাথে করে নিয়ে
যাবে এখন ।

মরিয়া হয়ে শেষ বার ব্লেড চালায়
হাফিজ ।আরও কিছুটা কাটে শক্ত দড়ি –
তবে দু টুকরো হয় নি তখনও ।গায়ের
জোরে টান দেয় এবার ও ।সিয়ামকে তো
বটেও – খোদ হাফিজকেও অবাক করে
দিয়ে হাতের দড়িটা খুলে যায় এবার !
এক মুহূর্তও দেরী না করে বাম হাতে
চেয়ারটা তুলে নিয়ে সপাটে আঘাত
করে সিয়ামকে ।বাতাসে ভোঁতা একটা
শব্দ করে সিয়ামের কপালে আছরে পড়ে
ভেঙ্গে যায় চেয়ারের একটা পায়া ।
খোলা দরজা দিয়ে ছিটকে বেড়িয়ে
যায় লম্পটটা বাইরে ।পড়ে যাওয়া
ছুরিটা তুলে নিতে না নিতেই ঘাড়ে
এসে পড়ে রুস্তম ।ইনি কিডন্যাপিং
ছেড়ে কুস্তিতে নামলেই ভালো করতেন
। গায়ে একমণ ওজনের শুধু পেশি-ই ।
হাফিজকে অনায়াসে ছুঁড়ে মেরে
দেয়ালে আছড়ে ফেলে রুস্তম ।হাত
থেকে চেয়ার খসে গেলেও ছুরি ছাড়ে
না হাফিজ ।তবে দেয়ালের সাথে
আছড়ে পড়ায় ওর মনে হতে থাকে হাড়-
হাড্ডি একটাও আস্ত নেই আর ।রুস্তম এক
পা এগিয়ে আসতেই সাঁই করে ছুরি
চালায় হাফিজ ।খপ করে ছুরি ধরা
হাতটা ধরে একটা মোচড় দিতেই ওটা
পড়ে যায় ওর হাত থেকে ।হাফিজের
মুখে আছড়ে পড়া ঘুষিটা ওর সারা শরীর
কাঁপিয়ে দেয় । আবার দেয়ালের গায়ে
ছিটকে যায় ও ।মুখ থেকে রক্তের চিকন
ধারা নেমে আসে ।আবারও এগিয়ে আসে
রুস্তম ।ওর বিশাল দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে
ডাইভ দিয়ে দেওয়ালের সাইড থেকে
বেরিয়ে এসে পোলের দিকে ঝাঁপ দেয়
হাফিজ ।বিপুল উৎসাহে ওর দিকে
এগিয়ে আসে রুস্তমও ।মাটিতে আছড়ে
পড়েছে পোলের কাছে হাফিজ , ওর
কলার ধরে টেনে তুলে রুস্তম – ঘুরেই
পালোয়ানের গলায় হাত চালায় হাফিজ
।সময় যেন থমকে যায় ।আস্তে করে
হাফিজকে ছেড়ে দিয়ে নিজের গলায়
হাত দেয় রুস্তম ।ফিনকি দিয়ে রক্ত
বেড়িয়ে এসেছে ওখান থেকে ।এক
সেকেন্ড পরই বিল্ডিং কাঁপিয়ে আছড়ে
পড়ে রুস্তম ।রক্তমাখা ব্লেডটা ছেড়ে
দিয়ে দ্রুত ছুরিটা তুলে নিয়ে ইরিনার
হাতের বাঁধন কেটে দেয় হাফিজ ।
তারপর তুলে নেয় মানিব্যাগ ।আতংকে
নীল হয়ে গেছে মেয়েটা ।ওকে
একহাতে জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে শক্ত
করে ছুরিটা ধরে রুমের বাইরে বেরিয়ে
আসে ওরা ।ঠিক বাইরেই হাত পা
ছড়িয়ে পড়ে আছে অজ্ঞান সিয়াম ।‘এই
শালার আসল নাম জানা হল না ।’ একটা
মাঝারি লাথি দেয় ওকে হাফিজ । একটু
আগে ইরিনার সাথে কি করতে এসেছিল
মনে পড়ে যায় ওর - ‘জবাই করে ফেলতে
ইচ্ছে করছে হারামজাদাকে ।’
‘না প্লীজ ।’ ওকে খামচে ধরে ইরিনা ।
তবুও দুই মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে ও পড়ে
থাকা শরীরটার দিকে ।বসে পড়ে
গলাটায় আসতে করে ছুরিটা চালিয়ে
দিতে ইচ্ছে করছে ওর ।‘আচ্ছা । ছেড়ে
দিলাম । চল, বের হই ।’
বাইরের ঘরে দাঁড়িয়ে থর থর করে
কাঁপছিল আঠারো বছরের একটা ছেলে ।
বিল্ডিং-এর কাঁপাকাঁপির পর ছুরি
হাতে রক্তে ভেজা জামা নিয়ে ওদের
বের হতে দেখেই প্রাণপনে বাসা থেকে
বেরিয়ে যায় ছেলেটা ।ওদিকে
মনোযোগ দেয় না হাফিজ ।বাম হাতের
ভেতর থর থর করে কাঁপতে থাকা
মেয়েটাকে নিরাপদে রাখতে পারলেই
খুশি ও ।বাসাটা থেকে বের হওয়ার পরই
ছুরিটা ড্রেনে ফেলে দিয়ে ছুটে আসা
অটোটা থামায় হাফিজ ।ওদের মধ্যে
কোন কথা হয় না ।হাফিজের বুকে মাথা
রেখে ইরিনাটা শীতার্তের মত কাঁপে
শুধু ।

ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে ইরিনার পুরো
সাতদিন লেগে যায় ।ওখান থেকে
বেরিয়ে দূরে এসে পুলিশের কাছে ফোন
দেয় হাফিজ । ওরা অবশ্য কিডন্যাপিং-
এর ব্যাপারটা জেনে গেছিল ততক্ষণে ।
কাজেই সময়ক্ষেপ না করে বাসাটায়
হানা দেয় ওরা ।বহুদিন ধরে খুঁজতে
থাকা আসামী রমিজ ফারদিনকে
অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে
ওরা আর দেরী করেনি ।হাফিজকে অভয়
দেয়া হয়েছে – রুস্তমের খুনের
ব্যাপারটা আদালত সহজ চোখেই দেখবে
।শুনানীর সময় ওর হাজির থাকলেই চলবে
।বিকালে ইরিনাকে ফোন দেয় হাফিজ
।‘ইরি, বের হতে পারবি ?’
‘হুঁ । একা একা ভালো লাগছে না রে ।
কই তুই ?’
আধঘন্টার মধ্যে ইরিনা চলে আসে ।
পাশাপাশি হাঁটে দুইজনে ।‘ইরি !’
নিস্তব্ধতা ভাঙ্গে হাফিজই । হাত
বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে । ‘তোর সেই
ফটোকপিগুলো । ’
হেসে ফেলে ইরিনা । ‘তুই মনে
রেখেছিস !’
‘হুঁ ।’ মন খারাপ করে বলে হাফিজ ।
‘ওইদিন আমার সাথে দেখা করলেই
তোকে লোপাট করে দেয় না আর ওরা ।’
‘এর পর থেকে শুধু তোর সাথেই বের হব ।’
গলায় কৃত্রিম বিষন্নতা এনে বলে ইরিনা
। ‘অ্যাই?’
‘কি ?’
‘দেড় কোটি টাকা ভার্সেস তিন টাকা
। তুই তিনটাকাকে জিতিয়ে দিয়েছিস
। বল কি চাস ?’
‘যা চাব তাই দিবি বলেছিলি ।’ মাথা
ঘুরিয়ে ওর চোখে চোখ রাখে হাফিজ ।
‘দেব তো । কি চাস সেটা বল ।’
‘ভালোবাসবি আমাকে ?’ হাফিজের এই
কথায় মুখের হাসি মুছে যায় ইরিনার
।‘এই রে ! বলে ভুল করে ফেললাম নাকি !’
– ভাবে হাফিজ ।
পরমুহূর্তেই ওর দুই গাল ধরে ওকে কাছে
টেনে ঠোঁটে ঠোঁট মেশায় মেয়েটা ।
হতভম্ভ হাফিজ কাছে টানে ইরিনাকে
।এই পাগলিটাকে ও আর একটুও দূরে
যেতে দেবে না !
লেখা : কে.পি.ইমন

No comments

Powered by Blogger.