Header Ads

খুনসুটিময় ভালবাসার সংসার


সারারাত লেখালেখি করে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে
সকালে ঘুম ভাঙতেই চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে দেরি হলোনা।
আর তাই বুঝতেও দেরি হলোনা,
যে চেঁচামেচিটা কাকে নিয়ে !!
.
কাল সুমি লবণ আনতে বলেছিল, ভুলে গিয়েছিলো,
আর সকালে উঠেই সুমি রান্না ঘরে গিয়েই তাই শুরু করে দিয়েছে ।
.
মনির্র কিছু বুঝে উঠার আগেই সুমির হুঙ্কার,
.
-- আচ্ছা, কাল বাজারে
গিয়েছিলেন আপনি?
আপনাকে আমি কিছু আনতে বলেছিলাম,

.
-- ইয়ে মানে না মানে………
.
-- কি, বলেন?
.
-- আসলে আমার ভুল হয়ে
গিয়েছে।
.
-- না না, আপনার ভুল হবে
কেন?
ভুল আমারই। আপনাকে বাজার পাঠিয়ে, মস্ত ভুল করেছি আমি।
এরপর থেকে নিজেই বাজারে যাব আমি।
আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা,
বেশ বুঝেছি আমি।
.
-- আসলে আমি দুঃখিত।
ভুল করে ফেলেছি। আর হবেনা।
.
-- নাহ, ঠিক আছে,
বেশ করেছেন।
এখন লবণ ছাড়া নাস্তা করেন।
আস্তে আস্তে হাত
মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো।
.
সুমি লবণ নিয়ে এখনো বকাবকি করছেন।
অথচ,
খেতে গিয়ে
দেখলো, সব ঠিক ঠাক,
লবণ এর পরিমানও ঠিকই আছে।
.
-- তাহলে?
.
মনির্র মুচকি হাসলো। খাওয়ার টেবিল
থেকে উঠে রান্না ঘরে যেয়ে সুমিকে পিছন
থেকে জড়িয়ে ধরলো।
.
সুমি হঠাৎ চুপ হয়ে যায় ।
.
মনির কানে কানে আস্তে আস্তে বলে,
.
-- তুমি রাগ করো নাকো, আর এমনটা হবেনা,
আসো নাস্তা করবে।
তুমি না খেলে আমি কি করে খাই বল ?
.
রাগে অভিমানে ফুলে থাকা সুমি মনিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
.
-- থাক! আর পিরিতি করতে হবেনা, বুড়ো হয়েছো,
তবুও তোমার ছেলে মানুষি গেলনা।
যাও, আসছি।
.
মনির চলে আসলো খাওয়ার টেবিলে,
সুমির ঠোঁটের কোনে কয়েক কোটি টাকার চেয়েও
দামি মিষ্টি একটা হাসি শোভা পায়।
.
বাকি রুটি গুলো শেকে খাওয়ার টেবিলে এসে দেখে,
মনির বসে আছে এখনো।
.
-- আচ্ছা, তুমি কি বলতো?
কখন নাস্তা দিয়ে গিয়েছি,
খাওনি কেন?
আজ অফিসে আবার দেরি হয়ে যাবে।
.
-- তোমার জন্য অপেক্ষা
করছিলাম।
.
-- বুঝেছি, বুঝেছি……খুব
বুঝেছি,
আর পাম মারতে হবেনা।
নাও খাও।
.
মনির আর সুমি দুজনই নাস্তা শেষ করে।
.
মনির নিছক ভদ্রলোক, একেবারেই মাটির মানুষ।
সুমিকে একটু বেশীই ভালবাসে।
আজ সকালের মত প্রতিদিনই এমনটা হয়।
সুমি তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে পুরো বাড়ি মাথায়ে তোলে আর মনির
চুপ করে দেখেন।
.
সুমির এমন কান্ড-কারখানা তার মজাই লাগে।
অফিস শেষ করে মনির বাড়ি ফেরে।
.
সুমিকে দেখে মনির বুঝেছে,
আজও মেয়েটা কেঁদেছে, চোখ দু’টো ফুলে আছে।
.
কিছুই বলেনা।
রাতে খাবারের পর নামায সেরে শোবার ঘরে এসে দেখে সুমি
চুপ করে বসে আছে।
.
-- কি হয়েছে, সুমিু?
.
-- মাহির কথা ভাবছো?
“মাহি
নামটা শুনতেই মনিরকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে।
সুমি আর মনিরের একমাত্র মেয়ে মাহিু”।
.
আহ্লাদে মানুষ হলেও আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই বড় হয়েছে।
.
ক’দিন আগে America চলে গিয়েছে তার খালার ওখানে,ওনাদের
কোন সন্তান হয়না কিনা তাই।
মেয়ের কথাই বার বার মনে পড়ছে সুমির।
মনির সুমির মাথায় হাত দিয়ে বলে,
.
-- সুমি আর তো ক’দিন
“মাহি” ফিরে আসবে,
এভাবে মন খারাপ করে থাকলে কেমন লাগে বলো?
সুমি চোখ মুছতে থাকে।
.
মনিরের হাতে একটা ছোট Ice Creamএর বাক্স।
সুমি Ice Cream খুব পছন্দ করে,
আর চকলেট ফ্লেভার তার সবচেয়ে প্রিয়।সুমিু অবাক হয়।
.
-- তুমি এটা কখন আনলে?মনির কিছু বলে না,
.
মুচকি হেসে বলে,
অফিস থেকে ফিরছি তখনি দেখি রাস্তার পাশে Ice Cream এর
দোকান। ব্যস, চট করে নিয়ে এলাম।
.
পূর্ণিমার আলোতে সুমি মনিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
মায়াবী চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে।
ভালবাসার সিক্ত হৃদয়ে সুমি বলে,
.
-- তুমি আমাকে এত্ত ভালবাসো?
.
-- চল, ঘুমাবে, অনেক রাত হয়েছে
.
সুমিকে ঘুম পাড়িয়ে, রাতজাগা পাখি হয়ে মনির কলমের আচড়
কেটে যায়,
.
কাগজের গায়ে লেপ্টে থাকা কালি
যে অব্যক্ত বাণী প্রকাশের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত,
তা হয়তো তুমি বুঝবে না।
.
শুধুই আমার অন্তহীন হৃদয় অতলের বার্তা পৌঁছে দিতে চায়
তোমায়
কবি তার কবিতার পাতায় পাতায়,
যে বাণী লিখে যায়
তা হয়তো তুমি কখনো পড়বে না।।
.
তবু জেনে রেখো, সে শুধু তোমারই প্রসংশা।
আমার কবিতা লেখার এ হাস্যকর চেষ্টা
যে কথাটি মর্ম বুঝার সাধ্য হয়তো তোমার নেই,
তা হয়তো তোমার কাছে শুধুই হাস্যকর
তবু জেনে রেখো, কবিতাটি লেখা হয়েছে গভীর ভালোবাসায়।।
.
ভালোবাসি, বড্ড বেশিই ভালোবাসি তোমাকে
.
(সুমি আর মলমনির দু’জন দু’জনকে যতটা না ভালবাসেন তার চেয়েও
বেশী সম্মান করেন।
ভালবাসার মাঝে বেঁচে থাকাই জীবনের সবচেয়ে বড়
স্বার্থকতা।
ভালবাসুন, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে আপন করে।)
আপনার কি মনে আছে?

1 comment:

Powered by Blogger.