Header Ads

বলা হয়নি

Swift Biplob (হলুদ পাঞ্জাবী)
ভালবাসা! ভালবাসা সবার জীবনেই আসে। কেউ বুঝতে পারে, আবার কেউ বুঝতে পারে না। মূলত ভালবাসা হল- কাউকে ভেবে বারবার মিস করাকেই বুঝায়। ভালবাসা বিভিন্ন ধরনের হয়।
.
পূজা নামের একটি মেয়ে। গ্রামের বাবা-মায়ের বড়ই আদরের সন্তান সে। শৈশব কেটেছে পূজার অবহেলার মধ্য দিয়ে। স্কুল জীবনটাও অতিবাহিত হয়েছে সেই একা একা। স্কুলের কেউ পূজার সাথে বন্ধুত্ব করত না। পূজা তখন ভীষণ মন খারাপ করত। কিন্তু তার বাবা-মা সবসময় তার পাশে ছিল। সেসময় বাবা-মা ই হয়ে ওঠে পূজার সবথেকে ভালো বন্ধু। তাই বাবা-মায়ের ভালবাসায় বন্ধুত্বের অভাব কিছুটা পূরণ হলেও ইচ্ছাটা থেকে যায়। সকল ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের বন্ধুত্ব কাজে লাগে না। পূজার ভীষণ ইচ্ছে তারও অনেক বন্ধু-বান্ধবী থাকবে।
.
সময় অতিবাহিত হতে থাকে....
গ্রাম থেকে পূজা এখন ময়মনসিংহ শহরে চলে আসে। নতুন কলেজে ভর্তি হয়। পা বাড়ায় নতুন রঙিন স্বপ্নে। নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে একটু বিব্রত হয় সে। বাবা-মায়ের কথা বারবার মনে পড়ে তার। ধীরে ধীরে কলেজে অনেক বন্ধু হতে থাকে। ভূলে যেতে থাকে সেই বন্ধুত্বের অভাব। প্রতিদিন তার সকালটা শুরু হয় নিত্যনতুন রঙিন স্বপ্নে।
একদিন হঠাৎ পূজা ক্যাম্পাসে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায়। পড়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটা পূজাকে ধরে ফেলে। সেসময় তৈরি হয় এক রোমাঞ্চকর দৃশ্য। ক্যাম্পাসের সবাই তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। পূজার চোখ দু'টো লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কিছু না বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে। ছেলেটা, ও ছেলেটার নাম শিশির। এক মূহুর্তের জন্য তার হৃদয়ের স্পন্দনটা বেড়ে গেলো। সে পূজার হেঁটে যাওয়ার পথে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এ চোখ যেন সরানোর নয়। বারবার এমন রোমাঞ্চকর মূহুর্তের ইচ্ছে জাগে তার মনে। ভালই লেগেছে পূজাকে। ইতিমধ্যে বন্ধুদের গুঞ্জন শুরু হল।
কাঁধে হাত রেখে সিয়াম বলল,
"কিরে দোস্ত, এমন থমকে গেলি কেন? মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে নাকি? আরে হলে বলে ফেল না আমরা ম্যানেজ করে দিচ্ছি!"
শিশির একটু লজ্জিত হয়ে বলল,
"আরে না, কি যে বলিস তোরা? ঠিক পছন্দ না, মেয়েটা খু্ব ভালো মনে হচ্ছে। আর ধাক্কা লেগেছে কোন কথা না বলেই চলে গেল।"
পল্লব বলে ওঠল,
"আরে বলে ফেল না তোর পছন্দ হয়েছে। এমন করস কেন? মানুষের পছন্দ হতে পারে না?"
এবার একটু চিন্তিত হয়ে শিশির বলল,
"মেয়েটাকে তো ভালোই লেগেছে। মনে হচ্ছে ভদ্র টাইপের, কথাও কম বলে। আচ্ছা এখন চল, পরে দেখা যাবে কি করা যায়!"
.
শিশির ৪র্থ বর্ষের ছাত্র, বাড়ি নেত্রকোনা। হলেই থাকে সে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে এসেছে। এসময় আবেগে পড়াটা তার বোকামি হবে। তবুও মন কি আর বুঝে সে কথা?
রাত ১২ টা। বিছানায় এপাশ-ওপাশ গড়াগড়ি করছে শিশির। কিছুতেই ঘুম আসছে না। হঠাৎ পূজার আগমন তার হৃদয়ে আবেগের সৃষ্টি করেছে। শুধু ভাবনা একটাই পূজা, পূজা, পূজা। বারবার মনে করছে পূজার সাথে ধাক্কা খাওয়ার দৃশ্যটা। কিছুটা সময় কেটেছিল বেশ রোমান্টিকতায়। এবে-অপরের একদম অচেনা , তবুও বেশ আবেগ ছিল সেটাতে। ঘুম হয়নি সারারাত।
"ঝড়ের মত এসেছ তুমি, উতলা করেছ আমার মন।
তুমি ছিলে অসহায়, আমি ছিলাম আবেগময়।
একপলকে করেছ হৃদয় আনছান,
মন লেগে আছে তোমারি কল্পনায়।"
"শিশির ক্যাম্পাসে হাটছিল। পিছন থেকে পূজা তাকে ডাক দিল এবং বলল,
--এ যে শুনছেন? আপনার সাথে আমার কথা আছে। ভালবাসতে পারেন বলতে পারেন না কেন?
শিশির থতমত খেল। ক্যাম্পাসে এভাবে সবার সামনে জোরে জোরে বলার কি দরকারটা ছিল? ভালবাসি ঠিক আছে। তারপর সে লজ্জিতে কন্ঠে বলল,
--না মানে এমনিতেই।
পূজা শিশিরের হাতটা ধরল। শিশির এবার ভীষণ লজ্জিত হচ্ছে। চারিদিকে লোকজনের হইচই, এরই মধ্যে পূজা তার হাত ধরে বসল। সে চারপাশটা খেয়াল করে পূজার হাতটা সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল। তারপর পূজা বলল,
--কি না মানে এমনিতেই? চলেন ঘুরতে যাই! ফুসকা খাওয়াতে পারবেন? হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? চলুন!!
পূজার স্পর্শ পেয়ে শিশিরের শরীর একটা ঝাঁকি দিল। কোন কিছু চিন্তা না করেই রিক্সা নিয়ে চলল তারা। খুব দ্রুতই প্রেমটা হয়ে গেল তাদের।
তারপর নদীর ধারে শিশিরের কাঁধে পূজার মাথা। হাতের মুঠোয় হাত। ভালবাসার রঙিন স্বপ্ন।"
হঠাৎ সকালেই শিশিরের ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটাও বিলীন হয়ে গেছে। সে লাফ দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। ভেবেই নিয়ে সে পূজাকে পেয়ে গেছে। কিন্তু স্বপ্ন তো স্বপ্নই।।
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে সে। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখে মেয়েটা ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। এবছর ভর্তি হয়েছে। বেশ লাজুক স্বভাবের মেয়ে। শুনা গেছে সবসময় একা থাকতে ভালবাসে পূজা।
শিশিরের মন একেবারে উতলা হয়ে গেল। এক দেখাতেই প্রেমে পড়ে সে। রীতিমত ফলো করে পূজাকে। ভালো লাগা থেকে ভালবাসায় পরিণত হয়।
.
আরেকদিন.....
শিশির পূজার সাথে আবার ধাক্কা খায়। সে এবার ইচ্ছে করেই ধাক্কাটা দেয়। অনেকদিনের ইচ্ছে, পোষে রেখেছিল যতনে। কিন্তু এখন আর সেই আগের মত রোমাঞ্চকর দৃশ্যটা হল না। কি অদ্ভুদ ব্যাপার! পূজা বলল,
"সরি ভাইয়া, আমি দেখতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না!"
এমন মায়াবী কন্ঠ শুনে শিশির অবাক চোখে তাকিয়ে রইল কাজল-কালো চোখে। পূজা তেমন কিছু বলার সাহস পেল না। বোকার মত চলে যায়।
সেটাই যেন শিশিরের ভাল লাগা। তারপর শিশির পূজার ক্লাসরুমে পূজা যেখানে বসে সেখানে একটা লাল গোলাপ রেখে যায়। প্রথমদিন পূজা এই গোলাপটা পেয়ে মনে করে কেউ হয়ত ভূল করে ফেলে গেছে। এরপর থেকে পূজা প্রতিদিন তার বসার সিটে একটা করে লাল গোলাপ পায়। তার মনে সন্দেহ জাগে। তারপর আবার মনে মনে ভাবে, ধুর আমার মত মেয়েকে কে ভালবাসবে? হয়ত কেউ ভূল করেই বারবার আমার সিটে গোলাপ রেখে যাচ্ছে। সন্দেহের রহস্যটা বেশিদূর আগাতে পারেনি।
বোকা মেয়ে পূজা। সে বুঝতে পারেনা এটা কেন হচ্ছে। সবসময় নিজেকে ছোট ভাবে, কেউ তাকে ভালবাসবে কল্পনাই করতে পারেনা। ছোটবেলা থেকে অবহেলায় বড় হয়েছে, তাই হয়ত এমন অদ্ভুদ চিন্তা-ভাবনা তার মনে। পূজা বোকা হতে পারে কিন্তু তার মন একদম পবিত্র। কোন কলঙ্ক নেই।
.
শিশির সর্বদা পূজাকে ফলো করছে। মেয়েদের পিছনে ঘুরার অভ্যেস নেই তার। পূজা সেই অভ্যেসটা করিয়ে দিল মনের অজান্তেই।
একদিন ক্যাম্পাসের খারাপ ছেলেরা পূজাকে ফলো করার দায়ে শিশিরকে প্রচন্ড মারধোর করে। দু'দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পূজা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। কাউকে ভালবাসলে তাকে ভূলে থাকা দায়। শিশির অনেকবার চেষ্টা করেছে পূজাকে তার ভালবাসার কথাটা বলার জন্য। পারেনি, কথাটা বলতে পারেনি। কেমন জানি একটা ভয় কাজ করে তার মনে! শুনেছি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা হয় তাকে নাকি সহজে ভালবাসার কথাটা বলা যায় না। হারানোর ভয় থাকে তাতে, ভীষণ ভয়। সে এখনো বলতে পারেনি 'ভালবাসি তোমাকে'।
ইতিমধ্যে শিশিরের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হল। জীবনটাকে গুছানোর সময়, সময়কে এখন মূল্যায়ন করতে হবে। বদলাতে হবে জীবনকে, বাবা-মায়ের স্বপ্নটা পূরণ করতে হবে।
পূজাকে এখন আর তেমনটা ফলো করার সময় পাচ্ছে না সে। এরই মধ্য দু'একবার পূজাকে দেখেছিল । পূজার প্রতি তার এক ফোটা ভালবাসাও কমেনি। রেজাল্ট বের হয়ে গেল। ঘুরে দাড়ানোর সময় এখন শিশিরের। একটা ভূল সিদ্ধান্ত জীবনকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। চলে গেল ঢাকায়। না বলা ভালবাসাটা না বলাই থেকে গেল।
.
পূজা যথারীতিই ক্লাস করছে। কোন পরিবর্তন তার মনে উদয় হয়নি। তবে হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে, -"কেউ একজন আমাকে ফলো করত। এখন আর তাকে তেমন দেখা যাচ্ছেনে। এখন তো আর আগের মত বসার সিটে গোলাপ পাচ্ছিনা। সেই ভাইয়াটাকেও আর দেখছিনা। আচ্ছা, সেই ভাইয়াটার সাথে সবসময় দেখা হত কেন? তিনি কি সবসময় আমাকে ফলো করতেন নাকি এমনিতেই দেখা হত?"
এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মাথায়। উত্তর বিলীন, মিলাতে খুব কঠিন হচ্ছে।
.
এইমাত্র প্র্যাকটিকেল ক্লাস শেষ হল। পূজার সাথে তার বান্ধবী মিলি। সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো এখনো অজানা পূজার নিকট।
মিলি পূজাকে বলল,
"আচ্ছা পূজা, তুই কি জানিস এক ভাইয়া তোকে অনেক ভালবাসত?
মিলির কথাটা শুনে পূজা হঠাৎ চমকে গেল। সে ঠিক বিষয়টা বুঝে ওঠতে পারল না। তবে একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। ভীতু গলায় বলল,
"তুই কি বলতে চাচ্ছিস, একটু বুঝিয়ে বলবি? আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা।"
মিলি পূজাকে বুঝানোর জন্য আবার বলল,
"তোর কি মনে আছে, একটা ছেলে তোর সাথে ক্যাম্পাসে ধাক্কা খেয়েছিল। তারপর থেকে সে তোকে ফলো করত। ঐ ছেলেটা মানে ভাইয়াটা তোকে অনেক ভালবাসত। প্রতিদিন তোর বসার সিটে একটা করে গোলাপ রেখে যেত। তুই কি এগুলোর কিছুই বুঝতি না? আর তোকে ফলো করত বলে কলেজের খারাপ ছেলেরা সেই ভাইয়াটাকে অনেক মারধোর করেছিল। দু'দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু তবুও সে তোকে ভীষণ ভালবাসত। এখন সে ঢাকায় চলে গেছে। কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই।"
পূজার মাথায় ভারী আকাশটা ভেঙে পড়ল। এই মূহুর্তে সে ভীষণ চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ল। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,
"তার মানে উনিই প্রতিদিন গোলাপ রেখে যেত। আমাকে ফলো করত। আমি এর কিছুই বুঝতাম না। উনি আমার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল?"
সহ্য করতে না পেরে সে দ্রুত হলে চলে গেল। নানান ভাবনায় জড়িত হয়ে পড়ল। নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছে এই মূহুর্তে। একটা মানুষ তাকে এতটা ভালবাসত আর সে কিছুতেই বুঝতে পারল না।
.
পূজার চোখে অজস্র কান্না, সেই কান্নার ছোঁয়া পেয়েছে বিছানার বালিশ। স্বপ্নগুলো ঘুমের আড়ালেই রয়ে গেল। ভাবনাগুলো লুকিয়ে রইল সখের ডায়েরীতে.....
"উনার ভালবাসার কথাটা না বলাই থেকে গেলো। এত ভালোবাসতো আমাকে, একবারও বলতে পারল না? আমি কি এতটাই খারাপ ছিলাম যে আমাকে এতটা ভালবাসতো তাকে না বলে দিব?"
পূজার মনে এখন অনুশোচনা। হয়তবা তাকে সত্যিই অনেক বেশি ভালবাসতো তাই হারানোর ভয়ে কথাটা না বলাই থেকে গেল। এমন ভালবাসা সে কি আবার পাবে? কেউ কি আবার শিশিরের মত তাকে ভালবাসবে?
চলে গেল তোমার তরী আসবে না ফিরে ভালবাসার তরে।।

No comments

Powered by Blogger.