Header Ads

অপমৃত্য

আজ কে যে ঘটনা টি শেয়ার করব তা ২০০৪
সালে ঘটেছিল।
আমাদের বাসার পাশে ছোট একটা পুকুর।এরপর
এরপর ওসমান চাচ্চুর বাসা।উনি চাকরি করতেন আর
বদলি সুত্রে এখানে আসছিলেন।তার বাসার পরেই
বিশাল বাঁশঝাড় তার পর কান্দা(যেখানে ফসল
ফলানো যায়না শুধু চারা লাগানো হয়।)তারপর
ফসলের মাঠ আর মাঠ। তো চাচ্চুর কোনো
ছেলে নয় ছয় মেয়ে।বড় মেয়ে সুমা,পরে
নাছিমা,এরপর পলি,মলি,অনন্যা আর লাজিনা।ঘটনা টা ঘটে
ছিল পলি আপুর সাথে।উনি এখন আর আমাদের
সাথে নেই।তো ২০০৪ সালে উনি সপ্তম
শ্রেণীতে পড়তেন। সুমা আপু আর নাছি আপুর
বিয়ে হয়ে গেছিলো। বাড়ি তে বড় ছিল পলি
আপু।আপু ছিল শ্যামলা,কিন্তু চেহরা ছিল খুব সুন্দর।
ব্যবহার ও ছিল সুন্দর।তিনি প্রেম ও করতেন।
ওসমান চাচ্চু খুব রাগী ছিলেন।তো একদিন পলি
আপু তার বিএফ এর সাথে দেখা করতে
গেছিলো। সেদিন চাচ্চু বাসায় আসেন একটু
তাড়াতাড়ি আপু কে বাসায় না পেয়ে তিনি চাচী কে
জিজ্ঞেস করে উনি বলেনন যে মলি কে
নিয়ে কোথাই জানি গেল।উনি বসে ছিলেন
সন্ধ্যার পর পর বাড়ি ফিরেন পলি আপুরা।চাচ্চু খুব
রেগে ছিলেন।তিনি জানতে চান যে কোথায়
গেছিলা।পলি আপু ভয়ে কিছুই বলে নি কিন্তু মলি
কে তখন জোর করলে মারার ভয় দেখালে
সে বলে যে আপু একটা ছেলের সাথে দেখা
করতে গেছিলো। এটা শুনে চাচ্চুর মাথা ঠিক ছিল
না তিনি পলি আপু কে আচ্ছা করে পিটুনি দেন দিয়ে
ঘরে দরজা আটকে রেখে দেন।পর দিন
সকালে ওই বাড়ি তে খুব হইচই শুনা যায় সবাই গিয়ে
দেখে যে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে লাশ।সবাই
খুব অবাক হয়। চাচ্চু আর চাচী সবাই খুব কান্না
করছিল।আপুর মুখ টা নিল হয়ে গেছিল।আর গলায়
রশির কালো দাগ হয়ে গেছিলো। আর সারা
শরিরে আঘাতের অসংখ্য দাগ ছিল।সবাই বলছিল যে
পলি আত্ন হত্যা করার মেয়ে না হয়ত রাগের
বশে চাচ্চুই মেরে ফেলেছেন আর তারপর
ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিছেন।কিন্তু
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলল অন্য কথা।যে
আপু নাকি সুইসাইড করেছেন।গলায় ফাস দেওয়ার
কারনেই নাকি সে মারা গেছে।সুইসাইড কেস
বলে লাশ নিয়ে খুব ঝামেলা হয়।তো মারা যাওয়ার
তিন দিন পরে লাশ বাড়ি তে আনা হয় ততদিনে লাশ
পচা শুরু হয়ে গেছে ফুলে গেছে।মুখ চোখ
বিকৃত হয়ে গেছিলো। চোখ গুলি কোটর
থেকে বের হয়ে আসছিল।গালের মাংস লটকে
গেছিলো। সে এক ভয়ানক রুপ হয়েছিল।ওই লাশ
যেই দেখেছিল সেই ভয় পেয়েছিল।আপুর
লাশ দেখে আম্মু ৪ মাস একা একা ঘরে থাকতেন
না আর রাতে বেরও হতেন না।তখন আমি ছোট
ছিলাম তাই এসব বুঝি নি।পরে মায়ের থেকে
শুনেছি।তো আমাদের এইদিকে অপঘাতে মরা
মানুষ দের কে জানাজা দেওয়া হত না তখন আর মাটি
গোরস্থানে দিতে দেওয়া হত না।তাই আপুর লাশ টা
কে কোনমত্নন গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে
সেই বাশঝারের পাশে কান্দাতে মাটি দেওয়া হয়।
পরে কাকুর কাছে শুনেছিলাম।লাশ কবরে
নামানোর সময় নাকি সাদা কাপর টা লাল হয়ে
গেছিলো রক্তে।বাজে গন্ধ বের হচ্ছিল।আর
মাংস খুলে গেছিল।লাশে হাত লাগলে হাত দেবে
যাচ্ছিল। এরপরেই শুরু হয় আসল ঘটনা। পলি আপু
কে মাটি দেওয়ার পর দিন থেকেই সন্ধ্যার পরে
অই কান্দার পাড়ে শুনা যেত কান্নার আওয়াজ।পর পর
কয়েক দিন শুনার পর চাচ্চু এক হুজুর কে ব্যাপার টা
বলেন উনি বলেন অপ ঘাতে মরা তো তার উপর
জানাজা হয়নি।চল্লিশা যাওয়ার আগে এমনি করবে।
পরে ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।কিন্তু সন্ধ্যার
পরে কেও কান্দার দিকে যাস না।ঠিক ৪০ দিন পর
আর কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত না।তো সবাই
ব্যাপার টা ভুলে গেল ধীরে ধীরে।আমাদের
বাসার সামনে র বাসায় থাকত এক দাদু।তো দাদু রান্না
ঘর লেপার জন্য মাটি খুজছিলেন।কিন্তু তখন মাঠে
পাকা ধান।তিনি মাটি কই পাবেন তাই লুকিয়ে কান্দা
থেকে মাটি আনবেন ঠিক করলেন।কারন। চাচ্চু
জানলে আনতে দিবে না খুব কিপটে তো তাই।
তো রাতের বেলা লুকিয়ে তিনি মাটি আনতে যান।
প্রথম কয়েক খাঁচা মাটি বাড়ি নিয়ে আসার পর জখন
তিনি আবার মাটি আনতে যান তখন এশার আযান পরে।
এরপর মাটি কাটা শেষ করে উনি যখন ফিরে
আসবেন তখন শুনেন কেউ কাঁদছে। কে
কাঁদছে দেখার জন্য তিনি ঘুরে দাড়ান আর আবছা
আলোতে দেখেন যে পলির কবরে কেউ
বসে বসে কান্না করছে।পড়নে সাদা পোশাক তিনি
ভয় পেয়ে দোরে ছুটে আসতে গেলে
দেখেন যে সেটা গরিয়ে গরিয়ে তার দিকে
আসছে।সাথে সাথে তিনি আকাশ ফাটানো এক
চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যান। চিৎকার শুনে চাচ্চুরা
সেখানে যান আর গিয়ে দেখেন দাদু অজ্ঞান
হয়ে পরে আছেন।এরপর তাকে বাসায় নিয়ে
আসা হয় আর হুশ হয়ে তিনি এসব বলেন।এরপর
থেকে সন্ধ্যাধ্যার পরে অই দিকে কেউ ভুল
করেও যেত না।কিন্তু মাঝে মাঝেই ওই কান্দার
পাড় থেকে কান্নার আওয়াজ আসত।মাংস পচা গন্ধ
আসত।এরপর চাচ্চু আবার হুজুরের কাছে জান।আর
এই ব্যাপারে কথা বলেন তিনিই যে রাগের বশে
মেয়ে কে মেরেছেন সেটাও স্বিকার
করেন।তারপর হুজুর বলেন তো এটা অপমৃত্যু নয়
তার জন্য জানাজা দিতে হবে।জানাজা না পাওয়ার জন্য
সে এমন করছে।তাই জানাজা দিতে হবে।তাই সবাই
শুক্রবারে নামাজের পর সবাই আপুর কবর খুরে।
সেখানে কয়েক টা হাড্ডি ছাড়া আর কিছু ছিল না।সে
গুলি কে তুলে পুনরায় গোসল করিয়ে কাফন
পরিয়ে জানাজা দিয়ে সেই কবরে দাফন করেন।
এরপর আর সমস্যা হয়নি।কিন্তু চাচ্চুর চাকরি থেকে
বদলির নোটিশ আসায় তারা ওই বাসা বেচে স্ব
পরিবারে চলে যান। সেই কবর টা কান্দার পারে
আজও আছে।
লেখক : শারমিন আক্তার রিতা

No comments

Powered by Blogger.