Header Ads

দজ্জাল_বউ



রাজু মাস্টার্স কমপ্লিট করে বড় একটা চাকরী পেয়েছে।পলি নামের এক মেয়ের সাথে তার রিলেশন গড়ে উঠে।বছর খানেক কেটে গেল তার রিলেশনের মেয়াদ। পলির বাবা বড় বিজনেসম্যান। এক মেয়ে দু'ছেলে। পলি সবার ছোট।সবেমাত্র অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলো।এরি মধ্যে রাজুর সাথে প্রেমের রিলেশন গড়ে তুলল।একে অপরকে না দেখে থাকতে পারেনা।তাই দু'একদিন পর পর দু'জন হাওয়া খেতে বের হয়। বিভিন্ন জাগায় ঘুরাঘুরি তারপর নামী দামী হোটেলে ডিনার।এভাবে আর কত দিন......।
সম্পর্কটা শক্ত করে বাঁধতে হবে। রাজু দেখতে শুনতে মন্দ না।ভদ্র, নম্র, হ্যান্ডসাম। অনেক মেয়ে তার পেছনে ঘুর ঘুর.......।
কাউকে সে পাত্তা দেয়নি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত পলি নামের মেয়েটি তাকে প্রেমের জালে বন্দী করল। তবুও পলির ভয়, রাজু যদি অন্য কোন মেয়ের প্রেমের মায়াজালে........।
তাই ঘটা করে একদিন পলি বলে,
রাজু একটা কথা বলবো?
বল কি বলবে।
ইয়ে... মানে..... ইয়ে ....।
মানে মানে করছ কেন। কি বলবে সরাসরি বলো।
রাজু তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাস?
হ্যাঁ বাসি......।
তাহলে চল বাপীর সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দি।
এত তাড়াহুড়ার কি আছে?
তাড়াহুড়া মানে, বিয়ে করতে হবে না।
তাই বলে এত আরলি.....।
জান তুমি যদি আবার হারিয়ে যাও।
বারে কোথায় হারিয়ে যাবো? হারিয়ে গেলে ও সমস্যা কোথায়? আমার পুরো এড্ড্রেস তোমার জানা।
তবু আমার ভয় হয়.....।
তো এখন কি করতে চাও?
বারে বাপীকে জানাতে হবে না, আমাদের ভালোবাসার কথা।
ঠিক আছে তুমি জানাও............।
তো তুৃমি বলতে পারবে না।
না আমি পারবো না। তোমার কথা তুমি বলো।
ওকে চলো বাপীর অফিসে। আমার ভালোবাসার কথা আমি বলবো।
তুমি শুধু সাপোর্ট দিবে।
ওকে চল।
একটা রিক্সা দেখে রাজু ডাক দিল,
এই খালী.....।
ড্রাইভার এগিয়ে এসে বলে,
সাব আমারে কিছু কইলেন?
গুলশান ১ যাবে?
হু সাব যামু।
দু'জন রিক্সাই উঠে বসল।দশ মিনিটের মধ্যে রিক্সা গুলশান ১ পৌছে গেল।ভাড়া দিয়ে ড্রাইভারকে বিদায় করল।অতপর পলি রাজুকে নিয়ে বাপীর অফিসে অবস্থান করল।পলির বাবা জনাব মাসুদ চোধুরী টেলিফোনে বিসনেস পার্টনারদের সঙ্গে কথা বলছেন,ব্যস্ত, পলিকে হাত ঈশারায় বসতে বললেন।
পলি রাজু দু'জন পাশাপাশি বসল।মাসুদ চৌধুরী ফোন রেখে মেয়েকে জিজ্ঞেস করল,
মা মনি কি খাবে বল,চা না কপি?
বাপী আমি এখন কিছু খাবোনা। আগে রাজুর সঙ্গে পরিচয়, তারপর বাকী সব।
পলি রাজুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
রাজু উনি আমার বাপী মাসুদ চৌধুরী।
পরিচয় দেয়া মাত্রই রাজু ভদ্রভাবে সালাম দিল।তিনি সালামের জবাব দিয়ে জানতে চাইলেন,
তোমার পরিচয়?
আমি রাজু আহমেদ। একাউন্টিং এ অনার্স মাস্টার্স কমপিলিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জব করছি।
ওকে থ্যাংকস। তো ফ্যামিলিতে কে কে আছেন?
মা বাবা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। ভালোই তো চাকরীটা। তো আমার কাছে কি চাও।আমি তো বেকারদেরকে চাকরী দিই।
পলি রেগে মেগে আগুন হয়ে বলে,
বাপী তুমি যে কি, রাজু কি চাকরীর জন্য এসেছে?
তো কেন এসেছে?
বাপী আমি রাজুকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
তিনি মজা করে বলেন,
শুধু কি তুই ভালোবাসিস। রাজু বাসে না?
ওকে বাপী সে ও বাসে।
তো সমস্যা কোথায়?
পলির মাথা রাগে একেবারে বোম হয়ে ফুলে উঠল।সে গজ গজ করে বলে,
বাপী তুমি কি সব যা তা বলছো।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে হবে না।
এক্ষনি বিয়ে করবি।
বাপী তোমার সঙ্গে এ নিয়ে আর তর্ক করতে চাইনা।চল রাজু চল।
বাবার সামনে থেকে মেয়ে হন্ত দন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।বাবা মিটি মিটি হেসে হেসে বলে,
মেয়েটার যে কি রাগ। কথায় কথায় রাগ উঠে.........।
কিছু বলতে গেলে সমস্য। অঘটন ঘটিয়ে তবে শান্তি।ভাবলাম পড়ালেখা শেষ হলে, তারপর বিয়ে,কিন্তু এক্ষনি তাড়াহুড়া........।
ধৈর্যগুন বলতে কিচ্ছু নেই।
তিনি চিন্তা করে দেখলেন, মেয়ের বিয়ে এক্ষনি দেয়া আবশ্যক।তানা হলে হিতে বিপরীত হবে।তাই টেলিফোনে দাওয়াত থেকে শুরু করে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া সব ওকে করে বাসায় ফিরলেন।মেয়েকে খাবার টেবিলে ডাকতে গর্জে উঠে কড়া ধমক দেয়।
বাপী তুমি যাওতো, আমি খাবো না।
কি বলিস, দু'দিন পর রাজুর শঙ্গে তোর বিয়ে। এখন না খেয়ে বডিকে শুকিয়ে কাঠ করলে, তোর এ রুগ্ন চেহারার দিকে রাজু ফিরে তাকাবে?মাশ আল্লাহ রাজু অনেক হ্যন্ডসাম। ওকে আমার খুব পছন্দ।
রাজুকে ফোন করে বললেন তার মা বাবেকে নিয়ে আসতে। উনারা যেন বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে।
বাবার মুখে বিয়ের কথা শোনে মেয়ে হঠাৎ কেমন জানি নার্ভাস.......।
তাই আর কিছু না বলে খেতে বসল।
এদিকে রাজু ভাবলেন গরীব রিক্সা চালক বাবা আর গৃহিনী মাকে এই হাই সোসাইটিতে নিয়ে আসলে তার মান সম্মান টিকবে না। শশুর বাড়ির লোকজন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব,সবাই তাকে হেয় ও ছোট করবে।তাই উনাদেরকে নিয়ে আসলেন না। শুধু তাই নয় জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলেন না।মহাধুম ধাম করে পলি রাজুর বিয়ে হলো।রাজু পলিকে নিয়ে ফ্যামিলি বাসায় উঠল।
বিয়ে শাদীর ব্যাপার অনেক খরচা পাতি হয়েছে।এখন পকেট একেবারী খালী।বিয়ের সময় এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিল।মাস শেষে টাকা পেলে দিয়ে দিবে।পলির বাবা শিল্পপতি তার উপরে একটা মাত্র মেয়ে। কালার টিভি ফার্নিচেয়ার, সোপা, ডাইনিং টেবিল, আরো প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র দিয়ে মেয়ের বাসা একেবারে সাজিয়ে দিয়েছেন।অলংকারাদি ও কম দেননি।পুরো দুই সেট, স্বর্ন ও ডায়মন্ডের, আরো হরেক রকম সিটি গোল্ডের.........।
তবুও পলিদের মত বড়লোকের মেয়েদের টাকার অভাব কোন দিন ও পুরন হবেনা।এরা যত পায়, তত চাই।রাজু মাস শেষ মাইনে তুলল।বন্ধুর ধার করা টাকা দিতে হবে।তাই মা বাবার জন্য অল্প কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিল।এরপর বন্ধুর টাকা শোধ করে বাকী টাকা নিয়ে বাসায় ফিরল।প্রতিদিনের তুলনায় আজ একটু লেট হলো।এরি মধ্যে নতুন বউ রেগে বোম।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল,আজ রাজুর জন্য দরজা খোলবেনা।কারন একটাই, সে এত লেট করল কেন?
বলতে না বলতে আকাশ এসে কলিংবেলে টিপ মারলো।পলি শুনছে তবুও খোলছেনা।ঐ যে বললাম প্রতিজ্ঞা করেছে।কলিংবেল বেজে চলেছে।তবু ও পলি দরজা খোলছে না।এবার রাজু বাধ্য হয়ে মুটো ফোনে কল দেয়,পলি রিসিভ করে শুরুতে কড়া ধমক দেয়,
আজ বাইরে থাকবে। দরজা খোলবো না।
নরম সরে রাজু বলে,
জান, এসব কি বলছো, বাইরে কোথায় থাকবো।তাছাড়া নতুন বউকে ফেলে বাইরে থাকা যায়।প্লিজ জান দরজাটা খোলে দাও।
পলি গজ গজ করে কড়া ভাষায় বলে,
আগে প্রমিজ করো,
আবার প্রমিজ কেন।
রোজ রোজ লেট করে যাতে বাসায় না ফের, তার জন্য।
ওকে জান প্রমিজ করলাম। আর কখনো লেট করবো না।
এরপর পলি দরজা খোলে দেয়। রাজু ভিতরে ঢুকে ওয়াস রুমে গেল।এর ফাঁকে রাজুর বাবার ফোন আসে। মুটো ফোন বাজছে। দু'তিনবার বাজনার পর পলি ফোন রিসিভ করে। কিন্তু হ্যালো ট্যালো না বলে কান পেতে আছেন।রাজু বাবা সাড়া না পাওয়াতে বলতে শুরু.......
হ্যালো বাবা রাজু কথা বলছিস না কেন?কি হয়েছে তোর, অসুখ বিসুখ করে নি তো।কিরে রাজু কথা বলছিস না কেন?টাকা এত কম পাঠাইলি ক্যান। তোর মায়ের খুব অসুখ।ডাক্তার দেখাতে হবে।আরো কিছু টাকা পাঠিয়ে দিস বাবা........।
পলি কোন কিছু না বলে লাইন কেটে দিয়ে ফোন অপ করে রাগে বোম হয়ে বসে আছে।রাজু কিছুক্ষন পর ফ্রেস হয়ে ওয়াস রুম থেকে বের হলো। পলির মুভমেন্ট ভালো না। মনে হয় মুখে বারিবর্ষন লেগেছে।রাজু সোহাগ করে বলে,
জান তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?মনে হয় পুর্নিমার চাঁদে গ্রহন লেগেছে।
এই সেরেছে, পলি কি আর থেমে থাকে, তখনি শুরু হলো কড়া কড়া ভাষা,ধপাধপ বলতে শুরু,
রাজু তুমি নাকি তোমার বাবা মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়েছো?
হ্যাঁ পাঠিয়েছি।তো কি হয়েছে..........।
কি হয়েছে মানে,যা দিয়েছো ব্যস এখানে সমাপ্তি। আর কোন টাকা তোমার মা বাবাকে দিতে পারবে না।
আজব তো,আমি টাকা না দিলে বাবা মা খাবে কি..।
কি খাবেন মানে,উনারা কাজ করে খাবেন।
পলি তুমি এসব কি বলছো।উনারা এত কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে পেলে আমাকে মানুষ করেছেন।আর তুমি কিনা বলছো কোন টাকা দিতে পারবো না।কি সব জঘন্য কথা।
আমি এতকিছু বুঝিনা। আগামী মাস থেকে টাকা তুলে আমার হাতে এনে দেবে।যদি এর ব্যতিক্রম কর,আমি তোমার সাথে রিলেশন রাখবো না।
রাজু অনেক সাধনার পর পলিকে পেয়েছে।এখন বাবা মাকে কেন্দ্র করে রিলেশন ভাঙ্গা কি ঠিক হবে?গভীর মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে রাজু।একদিকে বউ, অন্য দিকে পিতামাতা কাকে রাখবে কাকে ত্যাগ করবে?তার ভিতরে মনুষ্যত্ববোধ জেগে উঠে বলে,
রাজু তুমি বিরাট ভুল করতে যাচ্ছ, মা বাবাকে ত্যাগ করলে পরকালে জাহান্নাম,জাহান্নাম,জাহান্নাম,............।
রাজু আর পারছে না অসহ্য যন্ত্রনা মনের ভিতর।কোনকিছু ভালো লাগছে না।মুটো ফোন হাতে নিয়ে অন করে গেম খেলতে সবেমাত্র সফটওয়ার ওপেন করল।ঠিক তখনি বাবার ফোন আসলো।রাজু বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।আর এ সুযোগে সে চলে গেল বারান্দায়। ফোন রিসিভ করে বাবাকে সালাম দিয়ে বলে,
বাবা কেমন আছো? মায়ের শরীর কেমন?
কোনমতে আছিরে, তোর মায়ের শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না।বড় ডাক্তার দেখাতে হবে। হ্যারে বাবা রাজু তোর শরীর ভালো তো? তোর কন্ঠ,কথাবার্তা এমন লাগছে কেন?
এক কথায় জবাব দিল রাজু,
বাবা ওসব কিছুনা। সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি তো তাই গলার স্বর বসে গেছে........ ....।
ডাক্তার দেখাস নি?
বাবা ওসব কিছু না। সেরে যাবে চিন্তা করোনা।
বাবা, মা, কি ঘুমিয়েছে?
হ্যাঁ রে ঘুমিয়েছে, তাছাড়া শরীর ও খুব খারাপ যাচ্ছে।
বাবা চিন্তা করোনা। আমি আগামী মাসে বেতন পেলে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেবো।মাকে বড় ডাক্তার দেখাবে কিন্তু.......।
ঠিক আছে দেখাবো,তো বাবা রাজু টাকা একটু বাড়িয়ে দিস .......।
দেবো বাবা দেবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা।মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।
বাবা রাজু তোর মা তোকে খুব দেখতে চাইছে। কবে আসবি বাড়ি...........।
ছুটি পেলে আসবো বাবা......।
ঠিক আছে বাবা রাজু, ফোন এখন রাখ, রাত অনেক হয়েছে শুয়ে পড়।তানা হলে শরীর খারাপ করবে।
ওকে বাবা রাখি, মায়ের টেক কেয়ার ঠিকমত করো কিন্তু।ভালো থেকো বাবা। আচ্ছালামু আলাইকুম।
বাবা ছেলের কথোপকথোন শেষ। রাজু মুটো ফোন অপ করে সামনে পা এগিয়ে দিল।ঠিক সেই মুহূর্তে তার পরির মতো বউটা তার পথ রোধ করে সামনে দাঁডাল।মুভমেন্ট ভালো না,চোখ দুটো উজ্জল লাল রঙ্গে রঞ্জিত,কোমরে কাপড় পেছানো,মনে হয়,যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে এসেছে।ঠিক তাই হলো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু, পলি আঁডিপেতে সব শুনলো।রাজু যে কথাগুলো লুকাবে তার ও কোন উপায় নেই,পলি কড়া ভাষায় বলে,
তুমি আবার তোমার বাবার জন্য টাকা পাঠাবে?
ঘাড় নেড়ে সাঁয় দিল রাজু,
হু পাঠাবো?
কেন কেন?
কেন মানে, আমার মা অসুস্থ বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।তাছাড়া তাদের খরচা পাতি লাগবে না।
লাগলে লাগবে, তাই বলে সব টাকা তোমাকে দিতে হবে।
তো কে দেবে?
কে দেবে মানে উনারা আগে যেভাবে চলেছে এখনো সেভাবে চলবে।তুমি একটাকা ও পাঠাতে পারবে না।প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর বিয়ের পর স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা।আর তুমি কিনা নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বুড়ো মা বাবার জন্য সর্বস্ব্য বিলিয়ে দিতে চাইছো।তোমার মত অপদার্থ স্বামীর সংসার আমি করবো না।এই আমি চললাম।
পরির মতো বউ তার উপর শিল্পপতির একমাত্র মেয়ে তাকে কি ত্যাগ করা বা ভুলে থাকা যায়। মন্দ আচরন করলে ও তো বউ জানের জান, প্রানের প্রান, তাকে কি ভুলে থাকা যাই।মা বাবা গোল্লায় যাক তাতে কি হয়েছে।যেমন করে হোক বউকে ম্যানেজ করতে হবে।এ যুগের কিছু কুশিক্ষিত স্টুপিডদের মত রাজু মুহূর্তে মনুষ্যত্ববোধকে গলা টিপে হত্যা করে বউকে ফিরিয়ে আনতে ছুটে গেল।পলি সবেমাত্র সিঁড়িবেয়ে নিচে নামলো।এত রাতে কোথায় যাবে আকাশকে ভয় দেখানোর জন্য এসব প্লেন।কিন্তু আদর্শ বাবার আদর্শ ছেলে এতসব বুঝলো না।তাই বউয়ের প্রেমে পড়ে নিজের মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়ে অনাদর্শ হয়ে গেল। আর তাই বউকে ডেকে আনতে গেল।
পলি রাজুকে দেখে গজ গজ করে চলে যেতে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।তখনি রাজু মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে বলে উঠলো,
প্লিজ জান যেওনা।ফিরে এসো, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আজ থেকে তোমার কথামত সবকিছু হবে।
পিছন ফিরে পলি বলে,
সত্যি বলছো তো?
ওকে জান সত্যি..............।
প্রমিজ করো আমার অর্ডার ছাড়া আর কোন কাজ করবে না।
ইটস ওকে জান................।
শুধু ওকে বললে হবে না।কাজে পরিনত করতে হবে।
জান বল কি করতে হবে।
প্রতি মাসের মাইনের টাকা আমার হাতে দিবে। বাজার সদাই থেকে শুরু করে সব কেনাকাটা আমি করবো।
ইটস অল রাইট।জান এবার বাসায় চলো।
রাজু পলি দুজন মিট হয়ে গেল।দুজন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠলো।তারা খুব হ্যাপি।
এদিকে রাজুর মায়ের অসুখ ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে লাগলো।বাবা বাধ্য হয়ে ছেলের কাছে ফোন দিল।রাজু পলি সোপায় বসে বসে টিভিতে স্টার ঝলসার সিরিয়াল দেখছে।মুটো ফোনে রিং বাজছে।দু'জনের টিভির দিকে মনোযোগ। তাই মুটোফোনের বাজনা শুনতে পেলোনা।
কি আর করা বাধ্য হয়ে বাবা ফোন রেখে দিলেন।এর পর থেকে বাবা ফোন করলে রাজু রিসিভ করতো না। শুধু তাই নয় মাসে মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিল।এমনি ভাবে পার হলো মাস খানেক। একটা কথা আছে না, সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা।ঠিক তাই হলো । রাজুর বিয়ের খবর বাবা মার কানে এসে ঠেকল।মা বাবা দুজনে কেঁদে কেঁদে বলে,
বাবা রাজু এজন্য বুঝি তোকে এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছিলাম।এর প্রতিদান তুই এভাবে দিলি।হায়রে পোড়া কপাল তোর বুঝি কোনদিন পরিবর্তন হবেনা।সারা জীবন পোড়াই থেকে যাবি।সেই থেকে দুঃখের ঘানি টেনে আসলাম যার ইতি এখনো...........।
সবই কপাল....।
তাদের মুখ দিয়ে আর কোন বচন বানী বের হলো না।চোখ বেয়ে পানি আর পানি..............।
সাগরের পানির চেয়ে চোখের পানির গভীরতা অনেক বেশী।সাগরের পানি সবাই দেখে।চোখের পানি দেখা যায় না। তাই এর পরিমাপ করা যায় না।এর গভীরতা যে কত ব্যাপক তা একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।
এদিকে রাজু প্রতিমাসের মাইনের টাকা তুলে বউয়ের হাতে এনে দেয়।বউ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চালাই। শাড়ি চুড়ি থাকা সত্বে ও আরো কিনে আলমিরা ড্র ভর্তি.............।
একে বলে অতিরিক্ত বিলাসিতা আর অপচয়।রাজু এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।ইদানীং মা বাবার কথা ও মনে করেনা। বর্তমান যুগের আনকালচার্ড স্টুপিড ছেলেগুলো সুন্দরী বউ পেলে মা বাবার কথা ভুলে যাই।রাজু ও সে দলের একজন।পরিরমত বউকে নিয়ে খুব মজে গেছে।হাসি আনন্দে মেতে থাকে অলটাইম।
এদিকে গরীব বাবা মায়ের দুঃখের অন্ত নেই।পেটে নেই ভাত পরনে নেই বস্ত্র।মহা কষ্টে দিন কাটছে উনাদের।ইদানিং বাবার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না।তবু ও তিনি বসে নেই।বউয়ের সখের একটা পালিত ছাগল ছিলো।তিনি বাধ্য হয়ে ওটা বিক্রি করে পুরানো একটা রিক্সা কিনলেন।এটা চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালান।তাও আবার নাইটে রিক্সা বাইতে যান।দিনে বাইলে লোকে বলবে, ছেলে এম.এ পাস বড় চাকরী করে, এরপর ও রিক্সা বাও ক্যান।ছেলের সম্মান রক্ষার জন্য বাবা রাতে রিক্সা বাইতে যান।দু'জনের বয়সের চাপ,তার উপরে বৃদ্ধ বয়সে পরিশ্রম,ছেলের দায়িত্বহীনতা, সব দুঃখ তাদেরকে জড়িয়ে ধরেছে।রিক্সা চালক জমির মিয়া অসুস্থ তবুও রিক্সা নিয়ে নাইটে বেরিয়ে গেলেন। স্ত্রীর জন্য টাকা যোগাড় করতে। তিনি খুব অসুস্থ খানা দানা বন্ধ। এমন কি পানি পর্যন্ত মুখে দেয়না।বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।আশ পাশের মহিলারা খুব আফসোস করল।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রাজুর ছোটবেলার খেলার সাথী প্রিয় বন্ধু বাবলু। তার বেশী দূর লেখা পড়া করা হয়নি।ছোট বেলায় বাবা মারা যায়। এর পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। সে গ্রামের পাড়ায় মুদি দোকান করে ফ্যামিলি খরচ ও ছোট ভাই বোনদের লেখা পড়ার খরচ চালায়।ছোট বোন শহরে হোষ্টেলে থেকে লেখা পড়া করে। কাল নাইটে আসবে।তাই চাচাকে আগাম বলতে এসেছে বোনকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু এসে একি দেখল,চাচীর অবস্থা ভালো না।বলতে গেলে শেষ পর্যায়ে, মুমূর্ষ অবস্থা।পরের ছেলে হয়ে করুন দৃশ্যটা সহ্য করতে পারলো না।চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
এদিকে পাষন্ড রাজুর, বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ সেই বিয়ের পর থেকে। বন্ধু বান্ধব এলাকার কেউ ফোন করলে রাজু ফোন রিসিভ করে না বউয়ের ভয়ে।শুধু তাই নয় বউ যা বলে তাই করে।তাই বাবলু অন্য নাম্বার থেকে কল করে, রাজু ভেবেছিল অফিসিয়াল ফোন তাই সম্মানের সহিত সালাম দিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,
হ্যালো কে বলছেন?
অপর প্রান্ত থেকে করুন কন্ঠে বাবলু বলে,
প্লিজ রাজু ভাই ফোন রাখিস না, আমি বাবলু।জানি আমার মুটো ফোন থেকে কল দিলে তুই কথা বলবিনা।তাই অন্য নাম্বার থেকে কল দিলাম।তোকে আজ একটা দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য। চাচির অবস্থা খুব খারাপ। যদি মাকে দেখতে যাস, তাহলে নাইটে চলে আয়।
বাবলু ফোন কেটে দিল।রাজু হ্যালো হ্যালো বলে আরো খবর জানতে চাইল।কিন্তু সংযোগ স্থাপন হলো না।
অফিস শেষ করে তাড়াহুড়া করে বাসায় গেল।তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নিল।বউ শুনলে রেগে যাবে তাই সত্যকে লুকিয়ে বলে,
পলি আমি অফিসের কাজে সপ্তাহ খানেকের জন্য বাইরে যাচ্ছি। অফিসিয়াল কাজতো আরো বেশী টাইম ও লাগতে পারে।তুমি ক'দিনের জন্য বাবার বাসায় চলে যেও।
ওকে জান যাবো।
বউয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজু নাইটের গাড়িতে রওয়ানা করল।
এদিকে রমিজ মিয়া নাইটের যাত্রী টানার জন্য অপেক্ষা.....।
শীতের প্রথম সিজন অল্প অল্প শীত পড়ছে।রমিজ মিয়া চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘামচা দিয়ে মুখ ডেকে বসে আছে।পরিচিত কেউ যাতে চিনতে না পারে।রাত প্রায় তিনটা এমন সময় একটা গাড়ি ষ্টেশনে এসে থামল।যাত্রীগন নামতে শুরু..............।
রাজু নেমে হন্ত দন্ত হয়ে রিক্সা খুঁজছে। এমন সময় দেখতে পেল ষ্টেশনের এক কোনে রিক্সায় ঘাপটি মেরে চাঁদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে এক বৃদ্ধ। রাজু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
এই খালী........ হাতিম পুর যাবে?
রমিজ মিয়া চোখ মেলে দেখে তার ছেলে রাজু, তাই দামা দামী না করে বলল,
হু যামু সাব উঠেন।
রাজু রিক্সায় উঠল।রমিজ মিয়া হ্যান্ডেলে চাপ দিলেন,রিক্সা এগিয়ে চলল।কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়ার অসুস্থ শরীরটা আর চলছে না।তিনি থমকে যান।রাজুর ও তাড়াহুড়া তাই রমিজ মিয়ার পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে কড়া ভাষায় বলে,
এই বুড়া মিয়া রিক্সা চালাইতে পারেন না, তবু ও এই বয়সে রিক্সা চালান ক্যান।আপনার কি ছেলে মেয়ে নেই?
রমিজ মিয়া কোন বচন বানী পেশ না করে, অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার দিল হ্যান্ডেলে চাপ।রিক্সা এগিয়ে চলল,কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়ার অসুস্থ দেহটি থেমে যায়।রাজু আবার ও থাপ্পড় দিয়ে পূর্বের বাক্য পেশ করল। রমিজ মিয়া কিছু না বলে আবারো হ্যান্ডেলে দেয় চাপ।রিক্সা এগিয়ে চলল,কিছুদূর যাবার পর রমিজ মিয়া আবার থমকে যাই।রাজু আবারো থাপ্পড় দিয়ে পূর্বের বাক্য পেশ করল।
তিন থাপ্পড় খাওয়ার পর রমিজ মিয়া আর থেমে থাকতে পারলো না।মাথা গামচাটা খুলে কেঁদে কেঁদে বলে,
অফিসার সাব আপনার মোবাইলের আলো দিয়ে দেখুন তো আমাকে চিনতে পারেন কিনা?
রাজু লাইট মেরে দেখে এতক্ষন যাকে বুড়ো লোক বলে থাপ্পড় মেরেছিল।সে অন্য কেউ না তার জন্মদাতা পিতা।রাজু কি করবে না কোন কিছু তার মাথায় কাজ করছে।যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ব সারা জিন্দেগী করলে ও শেষ হবে না।তবুও বাবার পা দুখানা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
বাবা আমি কঠিন পাপি। আমাকে ক্ষমা করে দাও... দাও......দাও.....।
বাবার পায়ের উপর মাথা ঠুকে ঠুকে কাঁদছে।বাবার চোখের জল ও থেমে নেই,অনর্গল ঝরছে......।
ক'মিনিট পর রমিজ মিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
বাবা রাজু,আর দেরী করা যাবেনা।বাসায় চল।তোর মায়ের অবস্থা ভালো না।
বাবা ছেলে আরলি ছুটে গেল বাড়িতে। কিন্তু এসে একি দেখল বাড়ি ভর্তি লোকজন।রমিজ মিয়া এগিয়ে এসে দেখে তার স্ত্রী আর নেই, পরপারে চলে গেছেন।মহিলারা পাশে বসে চোখের জল ফেলছে আর আফসোস করে বলে,
রমিজ ভাই আপনি আইছেন,আরো আগে আইলেন না ক্যান?ভাবি আপনারে চাইরা চিরদিনের জন্য চইলা গেছে।
রমিজ মিয়া স্ত্রীর এমন মৃত্যু সহ্য করতে পারলো না।হৃদয়ের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চিৎকার করে বলে,
রাজুর মা তুমি একি করললে, আমাকে একা রেখে চলে গেলা।আমারে নিয়া গেলেনা ক্যান......।আমারে এখন কে দেখবো.........।
এক চিৎকারে রমিজ মিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ল।রাজু পাঁজাকোলে করে বাবাকে বিছানায় শোয়ালো।নাকে মুখে হাত দিয়ে দেখলো শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে না।তবু ও দ্রুত গ্রামের হাট থেকে একজন ডাক্তার নিয়ে আসলো।ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন,
রাজু সাহেব আপনার বাবা বেঁচে নেই।স্ট্রোক করার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছেন।
ওহ!কি দুঃখ কি যন্ত্রনা, রাজু মৃত বাবা মায়ের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে,
বাবা, মা, তোমরা আমার উপর অভিমান করে এমনি ভাবে চলে গেলে......?
হে খোদা আমি পাপিরে এটুকু সুযোগ দিলে না, বাবা মায়ের সেবা যত্ন করার,পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার।বিলাপ করতে করতে রাজু পাগল প্রায়।তখনি বাবলু বলে,
রাজু ভাই এখন কেঁদে কোন লাভ নেই।তাছাড়া মৃত মানুষকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে নেই।এতে চাচা চাচির আত্মা আরো কষ্ট পাবে।উঠ ভাই, চোখের পানি মুছে ফেল।উনাদের দাফন কাঁপন করতে হবেনা।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিলে রাজুর বাবা মায়ের দাফন কাঁপনের কাজ শেষ করলেন।বাবলু অনেক চেষ্টা করল রাজুকে ভাত খাওয়াতে। ভাত খাওয়া দূরের কথা রাজু একফোটা পানি ও মুখে দেয়নি।শোকে পাথর, বুক ফেটে যাচ্ছে,কাউকে দেখতে পারছেনা তার যন্ত্রনার গভীরতে কতটুকু?
সারাদিন কেটে গেল।রাতে মায়ের ঘরে বিছানা ঝাড়ু দিতেই বালিশের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো ভাঁজ করা একটা কাগজ।রাজু খোলে দেখে মায়ের হাতের হাতের লেখা চিঠি।
বাবা রাজু,
আমার আদর সোহাগ ও ভালোবাসা নিস।তোরা সুখে থাক এ প্রার্থনা করি খোদা পাকের কাছে।
বাবা রাজু তোর হাতে যখন আমার এ চিঠি পৌছবে তখন হয়ত আমি থাকবো না।তাই বুড়ো বয়সে দু'কলম লিখতে বসলাম।সেই ছোট বেলায় হাতে খড়ি শিখেছিলাম।আর কোনদিন কাগজ কলম হাতে নেইনি।এখন বুড়ো বয়সে তোর অতিতের কিছু স্মৃতি স্বরন করে দেয়ার জন্য আবার হাতে খড়ি নিলাম।হ্যারে রাজু তুই যখন আমার পেটে ছিলি তখন খুব নাড়া চাড়া করতি।কোন কোন সময় খুব লাতি গুতা মারতি।আমি তখন উহঃ!আহঃ শব্দ করতাম।মা আমায় আদর করে রাশেদা না ডেকে রাশু ডাকতেন।মা বলতেন মা রাশু উহঃ আহঃ শব্দ না করে সবর মান,আল্লারে ডাক।কারন মা হওয়ার ক্ষেত্রে সকল মেয়েদের এমন হয়।এবার বুঝবি মা হওয়ার যন্ত্রনা কি?এরপর তোর জন্ম হলো।আমরা আলেম ডেকে তোর নাম রাখলাম। হাসি আনন্দে ভরে উঠল আমাদের ঘর।তোর বয়স যখন ছয় মাস পূর্ন হলো তোর খুব অসুখ করেছিল।দুধ মুখে দিলে খুব কেঁদে উঠতি।তোকে আমরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার একটা যন্ত্র বুকে বসিয়ে হাত পা চোখ মুখ ভালো করে দেখে নিলেন।তারপর কিছু ঔষধ লিখে বললেন,
এ ঔষধ গুলো নিয়ম মত খাওয়াবেন।আপনার বাচ্চার প্রচুর পুষ্টিহীনতা।বাড়তি খাবার খাওয়াবেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
ডাক্তার সাব বাড়তি খাবার কি?
বুঝিয়ে বলছি শুনুন,
বাড়তি খাবার হলো বুকের দুধের পাশাপাশি, ডিমের কুসুম কলিজা,খিচুড়ি শাক সবজি,ফলমুল,এসব...........।
ছয়মাস পূর্ন হলে বাড়তি খাবার না খাওয়ালে বাচ্চা নিয়ম মাফিক বেড়ে উঠবে না।শুধু তাই নয় অপুষ্টিতে ভোগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।এরপর আমাদের দু'জনের পরিশ্রমের সংখ্যা বেড়ে যাই। তোর বাবা নাইটে ও রিক্সা বাইতেন।আমি নকশী কাঁথা সেলাই করতাম। এমনিভাবে কঠোর পরিশমের মাধ্যমে তোকে সুস্থ রাখার জন্য বাড়তি খাবারের টাকা যোগাড় করতাম।এরপর শুরু হয় তোর পড়ালেখা.......।
হ্যারে রাজু তুই যখন ফাইভ ক্লাসে টেলেন্ট পুলে বৃত্তি পেয়েছিলি।তখন হেড় স্যার তোর বাবাকে ডেকে বলল,
রমিজ মিয়া রাজু আমাদর স্কুলের গর্ভ।তোমাকে স্যালুউট, রাজুর পড়ালেখার খরচ ঠিকমত চালিয়ে যাওয়ার জন্য।রাজু বড় হয়ে তোমার মুখ উজ্জল করবে।এখন না হয় একটু কষ্ট করলে পরে তো রাজার হালে থাকবে।এরপর তুই মেট্টিক,আই. এ তারপর অনার্স মাস্টার্স এতদুর যেতে আমাদেরকে কত কষ্ট করতে হয়েছে, তার কিছু স্বল্প কথা বলে গেলাম।বাবা রাজু আমরা কম খেয়ে তোকে ভালো মতন খেতে দিতাম।তোর শরীর যাতে ভালো থাকে।নিজেরা ছেড়া কাপড় পরে তোকে সময়মত জামা কাপড় কিনে দিতাম।শুধু কি তাই কত বেলা যে উপাস ছিলাম,তার হিসেব তোকে দিতে পারবো না।পেটের ভোগে যখন পেট কচলিয়ে উঠত,তখন সাদা পানি খেয়ে কোন রকমে ক্ষুধা নিবারন করতাম।মাঝে মাঝে রোজা ও রাখতাম সংসারের খরচ কমানোর জন্য।এতসব কার জন্য করেছি তোকে মানুষ করার জন্য।আজ তুই মানুষ হয়ে কি করলি, মা বাবাকে ভুলে গেলি।যার ঋন সারা জীবন শোধ করলেও শেষ হবে না ... ..।
আর তুই কিনা তাদেরকে ভুলে বসে আছিস?হ্যা রে রাজু তুই বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করেছিস তার জন্য আমাদের কোন অভিযোগ নেই।তোর বিয়ে,তোর বাসায়,তোর বউয়ের পাশে রিক্সা চালক রমিজ মিয়া ও তার স্ত্রীকে মানাবে না, তা মানছি।কিন্তু তাই বলে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলি?আমরা আমাদের সমস্ত সুখ বিলিয়ে দিয়ে, তোর সুখের কথা ভেবেছিলাম।আর তুই কিনা আমাদের সুখের কথা একটি বারের জন্য ভাবলি না। আল্লাহপাক পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন,"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছগীরা"। এই দোয়াটি পড়ে পিতা মাতার জন্য দোয়া করতে হবে।আর শৈশবে পিতামাতা সন্তানদেরকে যেভাবে লালন পালন করেছেন ঠিক বৃদ্ধাবস্থায় সন্তান, পিতা মাতাকে সেভাবে লালন পালন করতে হবে এটা আল্লাহ পাকের নির্দেশ ।আর তুই কিনা সব দায়িত্ব এড়িয়ে বউকে নিয়ে রাজার হালে দিন কাটাচ্ছিস।হ্যাঁরে আরেকটা কথা,তুই তোর পরিশ্রমের টাকা আমাদের জন্য নাইবা দিলি,কিন্তু আমাদের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে দিলেতো পারিস।ঐ যে তোকে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করেছিলাম, তার ভাড়া,আর তোর বাবা যে জন্মদিয়েছিল তার ফিস।এ সামান্য কটা টাকা পাঠিয়ে দিলেতো তোর বাবাকে এ বৃদ্ধবয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে নাইটে রিক্সা চালাইতে হতো না।ঐ টাকা দিয়ে কোন রকমে ভাত আর পানি কচলিয়ে খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করতাম ঠিক আগের মতো।বাবা রাজু সবশেষে তোর প্রতি আমাদের একটা কথা,আমরা তোকে লেখা পড়া শিখে ভুল করেছি।তুই তোর ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া শিখিয়ে বড় অফিসার বানাসনি। যদি বানাস তাহলে আমাদের মত বৃদ্ধ বয়সে না খেয়ে মরতে হবে।বাবা রাজু মনে রাখিস কিন্তু।হ্যাঁ রে রাজু আমার শরীর ভালো না। আর বাঁচবো না রে, ভালো থাকিস।খোদা হাফেজ।
ইতি
তোর গর্ভধারিনী
রাশেদা বেগম রাশু।
চিঠিটা পড়ার পর রাজু বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।কিন্তু এখন কেঁদে আর কি লাভ।সব মেয়ে ভালো না,আবার সব মেয়ে খারাপ ও না। তো ছেলেদের উচিত রিলশনের পুর্বে ভালো করে জানা শুনা করা।কিন্তু ছেলেরা সুন্দরী মেয়ে পেলে ভালো মন্দ যাচাই করে না।বলে সুন্দরী হলে চলবে।পলি তাদের দলের একজন।পলিরমত কুশিক্ষিত আনকালচার্ড স্টুপিড মেয়েরদের কারনে আজ রাজুর মা বাবার এ ভয়ানক করুন মৃত্যু দৃশ্য, যা ইতিহাস হয়ে রইল।এরা রাজুর মত ছেলেদের মিষ্টি কথায় বুলিয়ে বিয়ে করে, তারপর জঘন্য রুপ ধারন করে।তখন এদেরকে ত্যাগ করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।আর রাজুর মত শিক্ষিত স্টুপিড় ছেলেরা তখন বাধ্য হয়ে মা বাবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।এরা আসল প্রকৃত আদর্শ বউ না।এরা হলো কু'শিক্ষিত আনকালচার্ড স্টুপিড, "দজ্জাল বউ"।
বিঃদ্রঃফেইস বুক ভাই বোন ও বন্ধুরা আমি ছোট খাটো একজন বাস্তব বাদী লেখক।বাস্তবতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরা আমার কাজ।আজকের গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।সবাই পড়বেন।আর যাতে এমন দৃশ্য আমাদেরকে দেখতে না হয়, সেদিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন।
আফছানা খানম অথৈ

No comments

Powered by Blogger.