দোয়া করি বৃষ্টি ভালো থাকুক
আগে আমি বিদেশ চলে যাই। মানে ওর বিয়ের
পরের দিনই। তারপর আর যোগাযোগ রাখা হয়নি।
দেশে আসার পর একদিন ওর সাথে দেখা। দেখালাম
সাথে একটি বাচ্চা।
- কেমন আছিস, রাসেল?
- এইতো ভালো। তুই?
- আল্লাহ রাখছে ভালো। বাচ্চাটা কি তোর?
- হুমমম। মাইশা নাম।
একটা চিপস কিনে দিলাম। কিন্তু নিলোনা। রাসেল বলার
পর নিলো।
অনেক সুইট দেখতে।
- ভাবী কেমন আছে রে?
রাসেল চুপ হয়ে গেলো। কথা বলতেছে না।
হঠাৎ মাইশার আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করাতে রাসেলের
চোখের কনা তে জলের দেখা পেলাম।
আমার মনে সন্দেহের অবকাশ দেখা দিলো।
চেপে ধরলাম রাসেলকে। বৃষ্টির কি হয়েছে
সেটা জানতে চাইলাম। রাসেলের স্ত্রীর নাম বৃষ্টি।
একটা রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলতে লাগলাম।
রাসেল কিছু বলতে চাচ্ছিলোনা। পরে জোর করার
ফলে বলা শুরু করলোঃ-
পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও মূলত আমরা
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।
বৃষ্টির সাথে বিয়ের পর থেকে আমার অনেক
ভালোলাগে। আমরা দুজনেই অনেক সুখে ছিলাম।
প্রতিদিন সকাল বেলা অফিস যাওয়ার আগে আমাকে ওর
মিষ্টি ঠোঁটে একটা কিস করে দিতো। অফিসে
গিয়ে বসকে ফাঁকি দিয়ে ফোনে কথা বলতাম বৃষ্টির
সাথে। রাতে বাসায় আসতাম যখন ও আচল দিয়ে আমার
ঘাম মুছে দিতো। অনেক সময় সারাদিন কাছে না
পাওয়ার আক্ষেপে আমায় জরিয়ে ধরতো। আমিও
পাগোল টাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য কপালে একটা
কিস করে দিতাম। রাতের বেলা খেয়ে দেয়ে
যখন আমরা ঘুমাতাম তখন মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে
গেলে দেখতাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
- কি দেখছো অমন করে।
- আমার সুন্দর বরটাকে দেখছি।
- ওরে আমার লক্ষীটি। এখন ঘুমাও।
- না। আজ ঘুমাবোনা। চলো ছাঁদে যাই। আজ অনেক
জোছনা রয়েছে।
আমার ক্লান্ত শরীরে ছাঁদে যেতাম। ভালো
লাগতো পাগলীর পাগলামি টাকে। ছাঁদে গিয়ে চাঁদের
আলোতে বৃষ্টির মুখটা অনেক সুন্দর লাগতো। ও
আমার বুকে মাথা লুকিয়ে শুয়ে থাকতে। গান গাইতে
বলতো আমায়। আমি হাতির মত সুরে গান গাইতাম ও
হাসতো আমার গান শুনে। তারপর আমার বুকে মাথা
রেখেই ও ঘুমিয়ে যেতো। তারপর আমি
পাগলীটাকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে
শুইয়ে দিতাম। পাগলীটাকে ঘুমন্ত সময় অনেক মিষ্টি
লাগতো। মাঝে মাঝেই ছাঁদে যেতাম। ওর
জন্মদিনের দিন রাতে আমি ওকে অনেক বিশাল
সারপ্রাইজ দিতাম। সারারাত ওকে নিয়ে ড্রাইভিং করতাম। সারা
শহর ঘুরতাম ওর জন্মদিনের দিন। আমাদের প্রথম
anniversary এর দিন অনেক মজা করি। বলছিলাম যে
অাজ রাতে বাসায় আসতে পারবোনা। অফিসে কাজ
আছে। আসলে মিথ্যা বলি ওকে। অামি নিচের
ফ্লাটে বন্ধুর বাসায় ওয়েট করছিলাম ১২ টা বাজার
অপেক্ষায়। ঠিক রাত ১২ টার সময় রুমে ইয়া বড় একটা
কেক নিয়ে হাজির হই। দেখি ও কাঁদছিলো। আমায়
দেখে হাসি ফুটে ওঠে ওর মুখে। পরে সব খুলে
বলার পর ও আমায় বললো কেন মিথ্যা বলছিলে?
আমি বললাম কাঁদলে তোমায় কেমন দেখায় সেটা
জানার জন্যই এমনটা করেছি।
এক কথায় ওর সাথে আমার সম্পর্কটা ছিলো সম্পূর্ন
ভালোবাসায় ভরা। আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে বের
হতাম। শাপলা ফুল তুলে এনে ওর মাথায় গেঁথে দিতাম।
ও ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করতো।
আমাদের ভালোবাসার ফসল হচ্ছে এই মাইশা। বিয়ের
ঠিক ৪ বছর পর মাইশা আসে আমাদের কোল জুড়ে।
এতোদিন খুব ভালোই ছিলো। ঝামেলাটা শুরু হয়
তারপরেই। মাইশা কে দেখাশুনা করার জন্য একজন
লোক রেখে দেই। একদিন ররাতে অফিস
থেকে ফেরার পর দেখি বৃষ্টি বাসায় নেই। আমি
বুয়াকে বলি বৃষ্টি কোথায়।
বুয়া বলে বাইরে গেছে।
অামি ওর নাম্বারে বারে বারে ফোন দিচ্ছিলাম। কিন্তু
কেটে দিচ্ছিলো ও ফোন। আমি ওর কাসায় খোঁজ
করি। ওর বান্ধবীর বাসায় খোঁজ নেই। কিন্তু কোথায়
ছিলোনা ও। টেনশনে আমি মাইশাকে কোলে
নিয়ে বেরিয়ে পরি বৃষ্টির খোঁজে। ফোন দেই
বারে বারে। কিন্তু কেটে দিচ্ছিলো ফোন।
খুজে না পেয়ে আমার প্রচুর টেনসন হচ্ছিলো।
অন্যদিকে মাইশা ক্ষুধায় কান্নাকাটি শুরু করে
দিয়েছিলো। দুধের শিশু মায়ের দুধ ছাড়া কিছু খায়না।
রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন বাজে ১২ টা। রুমে গিয়ে
দেখি বৃষ্টি ফিরে আসছে। এসে ঘুমিয়ে পরছে।
কিছু বলিনা আর ওকে। মাইশাকে দুধ দিতে বলি। কিন্তু
দেয়না। ঘুমের মধ্যে কিছু বুঝতেছিলোনা। মুখে
দেখলাম মদের গন্ধ। আমি নিজেই ওর দুধ মাইশার
মুখে লাগিয়ে দেই। কান্না থেমে যায় মাইশার।
সকাল বেলা জিজ্ঞেস করলাম কই গিয়েছিলে
রাতে???
কিছু বললোনা। আমি বুঝতে পারছিলাম কোন
ডিস্কোতে গিয়েছিলো হয়তো।
পরে ও সত্যিটা বলে।
আমি কিছু বলিনা। রাগ করে কিছু না খেয়ে অফিস চলে
যাই। দুপুরে দেখি বৃষ্টি মাইশাকে নিয়ে আর খাবার
নিয়ে অফিসে হাজির। মাফ চাইলো। বললো আর
কোনোদিন যাবেনা ডিস্কোতে। বান্ধবী জোর
করে নিয়েগিয়েছিলো। আমি মাফ করে দেই। ও
বাসায় চলে যায়। কিছুদিন সব ঠিকঠাক যাচ্ছিলো। কিন্তু
পরে জানতে পারি ও আমাকে না জানিয়ে লুকিয়ে
ডিস্কোতে যেতো। আমি বাড়ি ফেরার আগেই ও
ফিরে আসতো। আমি কিছুই বুঝতামনা। হঠাৎ একদিন
দেখি ও রাতে বাসায় আসেনা। আমি অনেক খুঁজি।
পাইনা। টেনশন নিয়ে মাইসাকে কোলে নিয়ে
সারারাত খুঁজি। বারেও খোঁজ নেই। কিন্তু ছিলোনা ও
সেখানে। আমার খুব খারাপ লাগছিলো। সকালবেলা
দেখি ও বাসায় আসে। আমি প্রথম বারের মত ওর
গায়ে হাত তুলি। একটা থাপ্পর মারি। কোথায়
গিয়েছিলো জানতে চাই।
কিছু বলেনা শুধু চুপ করে কাঁদে।
আমার তখন প্রচুর রাগ ছিলো মনে। ওরে মেরে
আমার নিজেরও খারাপ লাগছিলো। ওর কাঁদা দেখে
আর কিছু বলিনি। মেয়ের মায়া কান্না কেন যে সহ্য
করতে পারিনা। ওইদিন রাতে ও যখন ঘুমায় তখন লুকিয়ে
ওর ফোন চেক করি। ম্যাসেজ বক্সে গিয়ে দেখি
রনি নামের একটি ছেলের সাথে প্রচুর ম্যাসেজ।
ম্যাসেজ গুলা পড়তে পড়তে আমার শরীর
কেঁপে উঠলো। পরে বুঝতে পারলাম রনির সাথেই
ও বারে ড্রিংস করতো। ওর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে
দেখা করতো। ওইদিন রাতে ওর সাথেই ছিলো বৃষ্টি।
পরকীয়া করছে রনির সাথে। আমি অনেক কাঁদলাম
রাতে মাইশাকে কোলে নিয়ে। রনিকে লুকিয়ে
ফোনদিয়ে জানতে পারলাম আসলেই ওর সাথে
এমনটা করছে বৃষ্টি। পরের দিন বৃষ্টিকে সব দেখাই।
বৃষ্টি সব স্বীকার করে নেয়। আর আমার সাথে
থাকবেনা বলেও সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিনই ও মাইশাকে
ফেলে চলে যায় বাপের বাড়ি। তারপর ডিভোর্স
লেটার পাঠিয়ে দেয়। ডিভোর্স লেটারে সাইন
করার আগে বৃষ্টির সাথে একবার দেখা করি। দেখা
করতে গিয়ে দেখি ও আর রনি একসাথে। ডিভোর্স
লেটারটা সাইন করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসি ওর
সামনে। ভাবছিলাম সুইসাইড করবো। কিন্তু মেয়ের
মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারিনি। বৃষ্টিকে
ভুলে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। অনেক
রিকুয়েস্ট করি বৃষ্টিকে ফিরে আসতে। আমার জন্য
না হলেও মেয়ের জন্য হলেও যেনো ফিরে
আসে। কিন্তু ও শুনেনি। বিয়ে করে ফেলে
রনিকে। আমার মেয়েটা মা ছাড়া একা হয়ে পরে।
কিন্তু আমি ওকে ওর মায়ের অভাবটা বুঝতে দেইনি।
আমার মেয়েটিকে আমি ওয়ানে ভর্তি করে
দিয়েছি। স্কুলে আমি দিয়ে আসি আমিই নিয়ে আসি।
যখন মাইসা ওর আম্মুর কথা জানতে পারে ওর দাদুর
কাছে যে চলে গেছে তখন মাইশা আমাকে বলে
আম্মু অনেক পঁচা। আম্মু তোমাকে কষ্ট দিছে।
আমি বলি না বাবু, তোমার আম্মু ভালো। মাইসা বিশ্বাস
করেনা। ওর কাছে ওর আম্মু পঁচা। এই পিচ্চি মেয়েটা
আমায় অনেক টেক কেয়ার করে। এখন ওর বয়স
১০। রাতে মাইশা আর আমি ছাঁদে বসে তারা গুনি। মাইসা
আমার কোলে ঘুমিয়ে পরে। ও ঘুমালে ওকে
নিয়ে রুমে চলে আসি। একদম ওর মায়ের মত
হয়েছে আমার মেয়েটা। গান শুনাতে বলে
আমাকে। বলে বাবা গান গাও। আমার গান শুনে মাইসা
হাসতে। মাইসা কে নিয়ে আমার বেড়াতে যাওয়া
লাগে। ওর আম্মুকে নিয়ে যেখাসে বেড়াতে
যেতাম মাইশাকে নিয়েও সেখানে যেতাম।
পুরোনো কথা মনে পড়লে আমার চোখ দিয়ে
পানি বের হয়ে আসতো। মাইসা আমার চোখের পানি
মুছে দেয়। ও কখনও ওর আম্মুর কাছে যেতে
চায়না। বলে আমিই নাকি ওর সব। আমি মাইশাকে নিয়েই
এখন সংগ্রাম করে বেঁচে আছি। দোয়া করি বৃষ্টি
ভালো থাকুক।
এই হচ্ছে তোর ভাবীর কাহিনী। বলেই কেঁদে
উঠলো রাসেল।
আমি রাসেলের কথা শুনছিলাম। দেখলাম রাসেলের
চোখে প্রচুর পানি। ভালোবাসার পানি। মাইশা
রাসেলের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে
পড়েছে। আমি নিজেও চোখের পানি ধরে
রাখতে পারলামনা। বললাম বৃষ্টির সাথে আর কোনদিন
দেখা হয়নি???
- হয়েছিলো। মাইসা একবার প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে
পড়েছিলো। হসপিটালে ভর্তি ছিলো। আমি অনিচ্ছা
সত্বেও বৃষ্টিকে জানাই। বৃষ্টি দেখতে আসে।
আমার মাথে প্রায় ৮ বছর পর দেখা। বললাম কেমন
আছো। চোখে পানি নিয়ে বললো, ভালো। মাইসা
কে কোলে নিতে চায় কিন্তু মাইসা বৃষ্টির কোলে
যায়না। বলে তুমি পঁচা। তুমি চলে যাও। পরে বৃষ্টি
কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে যায়।
আমি মাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। চোখের পানি আর
থামাতেই পারছিনা। খুব খারাপ লাগছে।
end
ধন্যবাদ কষ্ট করে গল্পটি পড়ার জন্য।
________ লেখকঃ সুমন অাহমেদ______
No comments