অতীত
একটা বাচ্চা কে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। ঠোঁটের নিচে একটা তিল। মেয়েটা দেখতে শ্যামলা। কিন্তু মুখের দিকে একবার থাকালে আর চোখ ফিরাইতে ইচ্ছা করে না। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞাস করলাম কে মা তুমি?
কিন্তু মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে ক্লাস রুম থেকে চলে গেল। মেয়েটির হেটে যাওয়া আমি লক্ষ্য করলাম। এই ছোট ছোট পায়ে হেটে যাওয়া টা আমার খুব পরিচিত। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা উত্তর না দিয়ে চলে গেল কেন।
পরের দিন আমি ক্লাসে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি মেয়েটি প্রথম সীটে বসে আছে। আমি রোল নম্বর ডাকতে শুরু করলাম। মেয়েটি ইয়েস স্যার বলল। আমি আবার থমকে দাঁড়ায়। মেয়েটার কণ্ঠটা আমার একদম কাছের মানুষের। যাকে আমি ৬ বছর ধরে দেখতে পাই নি। সেটা আর কেউ না আমার প্রথম ভালোবাসা মেঘার কণ্ঠ। ইশ! মেয়েটাকে কত না ভালোবাসতাম। দু' জনে মিলে সকাল বেলা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে এসে কালি পায়ে হাঁটতাম। সকালে আমার জন্য মেঘা কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে আনতো। তারপর আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিত। আর আমি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকতাম। আমাকে খুব ভালোবাসতো মেয়েটা। কিন্তু আমাদের দু'জনের কোনো দোষ ছিল না।
মেঘা একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমাকে নাকি তার বাবা দেখতে চান।
তাই আমি একটু হ্যান্ডসাম হয়ে তার বাবার সাথে দেখা করতে যাই।
আমি ও মেঘা এবং মেঘার বাবা একটা হোটেলে বসে আছি। কিন্তু আমাকে হঠাৎ মেঘার বাবা বলেন....
>> তোমার নাম কি?
>> আমি উত্তর দিলাম। আমার নাম হিমু।
>> তুমি তো এখনও স্টুডেন্ট। কিছু কর না। আর এ দিকে আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তুমি কবে লেখাপড়া শেষ করবে আর কবে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে। তাই আমি চাই তোমরা দু'জন্য পৃথক হয়ে যাও। আর কেউ কারো সাথে দেখা করবে না। ফোনে কথা বলবে না
।
আমি আমার মেয়ে কে একটা চাকরিজীবী ছেলের হাতে বিয়ে দিয়ে দিব। আমি সেদিন অন্য দিকে চেয়ে অনেক কেঁদে ছিলাম। মেঘাও কেঁদে ছিল। হয়তো আমাকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে। মেঘা এক সময় দেখতে পায় আমি কান্না করছি। তখন মেঘা কান্না করতে করতে দৌড় দিয়ে চলে যায়। এর পর থেকে আমাদের মধ্যে আর যোগাযোগ নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাসের সময় পুরিয়ে গেল। আমি ঠিক বুঝতেই পারি নি। তারপর ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে আসতে লাগলাম।
.
পরেরদিন স্কুলের মাঠে শাড়ী পরিহিত একটা মেয়ে কে দেখতে পাই। এই স্কুলের ছাএী কে নিয়ে এসেছে। আমি আমার অফিস রুমে গিয়ে বসে আছি। কিন্তু অফিসে কিছু ভালো লাগছে না। তাই ছাদে গেলাম। একটু সময় পর কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। সামনের দিকে চেয়ে দেখি মেঘা। মেঘা আগে থেকে শুকিয়ে গেছে অনেক। কিন্তু তার শ্যামলা মুখটা সৌন্দর্য আর ১০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মেঘা আমাকে হঠাৎ বলে কেমন আছ....
>> এইতো কোনো রকম দিনকাল যাচ্ছে।
তোমার কি অবস্থা?
>> আর কি স্বামী সংসার নিয়ে ভালো হই আছি। এই স্কুলে আসার পর জানতে পারলাম তুমি নাকি এই স্কুলের হেডমাস্টার। তাই ভাবলাম এই নামটা তো আমার অনেক পরিচিত। মানুষ টা আর কি রকম পরিচিত কি বলব। (অভিমান মুখে)
>> মেয়েটির নাম কি রাখছ?
>> এই তো সোনিয়া। তুমি কি বিয়ে করেছ?
>> আচ্ছা এই বিষয় বাদ দেও। চল অফিসে।
>> বল না। অবশ্য তোমার চয়েস বলে কথা। মেয়েটা আমার থেকে অনেক সুন্দর হবে। বল না মেয়েটির নাম কি?
>> বিয়ে করলে তো মেয়েটির নাম বলব।
>> তুমি বিয়ে কর নি?
>> নাতো। এক মন কি আর সবাই কে দেওয়া যায়।
>> তুমি কেন নিজে কে কষ্ট দিচ্ছ। আমি তো পরিবর্তন হয়ে গেছি। তুমি হতে পারবে না কেন?
প্লিজ এমন কর না। একটা বিয়া কর।
>> মেঘা আমি তোমাকে সব সময় ভাবি। একটু অবসর সময় পেলেই তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতাম। ভাবতাম তুমি কি কর?
আমাকে ছাড়া তুমি এক মুহূর্ত থাকতে পারতে না। আর কিনা তুমি সংসার করছ। আমি ভেবে কান্না করতাম।
>> সব কিছু সময়ের কাছে হার মানে।
>> আমি তো হার মানি নি। আমি তোমাকে দোষী করছি না। সব কিছু আমাদের ভাগ্য।
আচ্ছা চল অফিসে।
>> শুনো। তুমি একটা বিয়ে কর। আমার কাছে একটা মেয়ে আছে। খুব সুন্দর। আমার মামাতো বোন। প্লিজ তুমি কষ্টে থাকলে আমি সুখি হতে পারব না।
>> থাক না। এসব করে কি লাভ। বয়স তো কম হয় নি। একা মানুষ একা থাকাই ভালো।
>> আমাকে আর কষ্ট দিও না। আমি আমার বোনের সাথে তোমার বিয়ে টা দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হব।
>> বাদ দেও তো। চল অফিসে।
.
>> হিমু আমার একটা কথা শুনো।
তুমি তাড়াতাড়ি শপিং মহলে আস।
>> কেন?
আমি এখন স্কুলে এসেছি।
>> আরে রাখ তো তোমার স্কুল।
তোমাকে আসতে বলছি আসো।
>> আচ্ছা আসতাছি। তুমি না আর কোনো দিনও পরিবর্তন হবে না। যেমন আছ তেমন ওই রয়ে যাবে।
>> ২০ মিনিটের ভিতরে আসো।
.
আমি সেখানে যাওয়ার পর অবাক হলাম। মেঘা আমাকে দেখেই মেঘা আমার কাছে চলে আসে। তারপর আমাকে কাজী অফিসের ভিতর নিয়ে যায়। আমি সেখানে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে বসে আছে। আর সেটা নাকি এখন আমার বউ হবে। আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম।আমি বিয়ে করতে চাই নি কিন্তু মেঘার জোরাজোরিতে বিয়ে করে ফেলি। কি করব মেঘা কে যে খুব সম্মান করি। আমি আবার মেঘার কোনো কথা ফেলতে পারি না। তাই বিয়ে টা করে ফেলি । কিন্তু যখন মেয়েটাকে দেখলাম তখন আমার মন টা খারাপ হয়ে গেল। কারণ মেয়েটা একদম পরিষ্কার আর মুখ টা এতো মায়াবী। তা আমি বলে বুঝাতে পারব না। কিন্তু আমি শ্যামলা রঙ এর মেয়েদের পছন্দ করি। কারণ তারা ভালোবাসতে জানে। আর সাদা রং এর মেয়েরা কষ্ট দিতে জানে। কারণ তাদের রুপের অহংকার বেশি। আমি অনেক মেয়ে কে দেখেছি তারা বেশি ভাব নেয়। কিন্তু এই মেয়েটাকে অন্য রকম মনে হলো। দেখি কি রকম হয় এই মেয়েটা। তারপর আর কি বাসায় চলে আসলাম।
.
বিয়ের আজ ১০ দিন হয়ে গেল। মেয়েটার সাথে তেমন কথা বলি না। দরকারি কথা ছাড়া আমরা দু'জন কথা বলি না। কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু আমি এড়িয়ে চলি। হঠাৎ মেয়েটা বলে....
>> প্রতিশোধ নিচ্ছেন।
>> আমি তো একদম বোকা হয়ে গেলাম । কি? আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি?
>> আপনি আপুর প্রতিশোধ টা আমার উপর ফেলছেন কেন?
>> আরে নাতো। আপনি কি যে বলেন?
>> তা নয়তো কি?
আমার সাথে ভালো করে কথা বলেন না কেন?
আজ ১০ দিন হয়ে গেল।
>> আসলে তুমি তো খুব সুন্দর। তাই নিজে কে খুব অসহায় লাগে। তাই তোমার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি না।
>> হিহিহিহি।
>> আপনার হাসি টাও অনেক সুন্দর। দেখেন বাতি টা ঝিলমিল করছে। আপনার হাসি টা দেখে।
>> কি ঝিলমিল করছে?( মেঘা)
>> আরে আপু তুমি?
কোথায় থেকে আসলে ?
>> এইতো স্কুলে ছেলে কে দিয়ে আসলাম। আর দেখলাম আপনার স্বামী স্কুলে যান নি?
তাই দেখতে আসলাম।
(মজা করে আপনি বলছে নইলে তুই করে বলে)
>> আপু এ রকম ডিলা মানুষ আমি কোনো দিনও দেখি নি। আমার সাথে কোনো কথা ওই বলেন না।
>> ও এ রকম ওই রে। ওকে আমি খুব ভালো ভাবে চিনি। ওকে তুই বুঝে উঠতে পারবি না। পারবি কিন্তু খুব কষ্ট হবে তোর। ওর প্রতি টা স্মৃতি এখনও আমাকে কাঁদায়।
খুব ভালোবাসতাম ওকে। কিন্তু কপালে লেখা ছিল না তাই ওকে পাই নি। কিন্তু আমি পাই নি তে কি হয়েছে। আমার বোন তো পেয়েছে। তুই ওকে মানুষ করতে পারবি না?
>> পারব আপু। তুমি পাশে থাকলে সব পারব।
>> আমি তো তোদের মাঝে ওই আছি। তোদের ছাড়া আমি বাঁচতে পারি। কিন্তু একটা কথা। তুই হিমু কে কিছুতেই মন খারাপ হতে দিবি না। খারাপ হলেই আমার কথা ভাববে। কারণ আমি তার মন ভালো করার হাতিয়ার ছিলাম।
>> আপু এখন আমি হাতিয়ার হব। তোমার থেকে আমি এখন বেশি ভালোবাসবো।
.
আমি মেঘাকে দেখার পর সেখানে থেকে চলে গিয়েছিলাম । তাদের কোনো কথা ওই আমি শুনি নি ।
.
রাতে যখন খেতে বসলাম তখন দেখি মাংস,মাছ,সবজি, ডাল, আলু বাজি সব রকম খাবার। আমি তো এসব খাবার দেখেই খেতে শুরু করলাম। কিছু সময় পর সুস্মিতা কে জিজ্ঞাস করলাম খেয়েছে কিনা। কিন্তু সুস্মিতা বলে স্বামী না খেলে কি বউ খায়। আমিও মুচকি হাসি দিলাম। আমি সুস্মিতাকে বলে ফেললাম জানো সুস্মিতা আমি যদি না খেতাম তাইলে মেঘাও খেত না।
>> আচ্ছা আমার মাঝে কি মেঘা আপু কে খুজে পান না?
>> পাই তো কিন্তু ভয় করে। আপনারা মানুষ কে ছেড়ে যান অতি সহজে । তাই আর আপনাদের ভালবাসি না।
>> ইশ! হাদারাম একটা?
আপনি সেদিন আপুকে আটকান নি কেন?
>> আটকালে খাওয়াব কি?
>> তো ওইটা বলেন।
শুনেন আপনি যদি আমাকে ভালো না বাসেন তাইলে আমি চলে যাব।
>> আচ্ছা ভালবাসবো। এখন খাঁই।
>> আচ্ছা খাঁন। পেট বড়ে খান।
>> তুমি আমার জন্য এতো কষ্ট করে কেন রান্না করছ?
>> কারণ তুমি তো আমার হবু স্বামী।
তাই এতো রান্না করছি।
.
>> আপনাকে আজ নিয়ে ঘুরতে যাব।
>> কি!
আবার বলেন তো।
>> দু'জনে ঘুরতে যাব।
>> হিহিহি।
মেঘা আপুকেও সাথে নিয়ে যাই?
>> আচ্ছা ফোন দেন।
আর বলেন তাড়াতাড়ি যেন রেডি হতে। ও আবার সাজতে সাজতে বারো টা বাজায় ।
>> আমার আপুর নামে বাজে কথা বলবেন না। আমার আপুর মতো ভালো আপু আছে নাকি।
>> হইছে হইছে এতো আপুর পক্ষে গিয়ে কথা বলতে হবে না। আপনি রেডি হন।
.
আমরা ৩ জন রাস্তা দিয়ে হাটতাছি। হঠাৎ মেঘা আমাকে বলে হিমু দেখ চাচা কে চিনতে পার কি না?
>> আমিও দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।
দূর থেকে তাকে দেখতে লাগলাম। খুব অদ্ভুত মানুষ।
>> আপু উনি কে?
>> আরে উনার কলা বাগান থেকে আমি আর তোর হবু জামাই কত কলা খাইছি। তার হিসাব আছে নাকি। তারপর কাগজের মধ্যে লিখে আসতাম চাচা কলা বেশি পেকে গিয়েছিল। একটা বান্দর কলাগুলো খেতে ছিল তারপর আমরা তাকে তাড়িয়ে আমরা নিজে খেয়ে পেলি।
>> হা হা হা।
আপু তোমরা দু'জন এতো দুষ্ট ছিলে।
>> আমাদের খুব সুন্দর দিন কাটতো। সে দিন গুলা কে খুব মিস করি।
এখন অবশ্য তুই এসব করতে পারবি। কারণ তোর হ হ হ বু জামাই। (মুচকি হাসি দিয়ে)
>> আপু উনি আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না। আমি শুধু বাসায় বসে থাকি। আমার একা একা ভালো লাগে না।
>> আচ্ছা দাঁড়া। আমি দেখ কি করি।
হিমু এ দিকে আসো তো।
>> কি?
>> তুমি আমার বোন কে কালি কষ্ট দেও কেন? তুমি নাকি ওকে ভালোবাসো না। এই টা কিন্তু ঠিক না।
>> না বাসিতো। একটু কম ভালোবাসি। তুমি হলে বেশি ভালোবাসতাম।
>> ইশ! হিমু অতীত নিয়ে আর ভাববে না।
বর্তমানে যা আছে তা নিয়ে ভবিষ্যৎ এর দিকে এগিয়ে যাও।?
>> তো আমাকে কি করতে হবে?
>> তুমি শপথ কর।
বলো সুস্মিতা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর তোমাকে কষ্ট দিব না।
>> আচ্ছা যাও বললাম। এখন কি করতে হবে?
>> আমাদের খিদা লাগছে। আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো।
>> ডাবের পানি আনব। ওই দেখ ডাবের পানি বিক্রি করতাছে।
>> মেঘার চোখে কিছুটা পানি এসে গেল। অতীত মনে পড়ে গেল।
>> মেঘা সরি।
তোমার অবশ্যই অতীত মনে পড়ছে?
>> কেঁদে কেঁদে বলল।
খুব মিস করি সেই দিন আর তোমাকেও। তুমি কেন আমার হলে না।
>> আচ্ছা এসব বাদ দাও। আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
>> সুস্মিতা আমার হিমু টাকে তুই দেখে রাখিস। কোনো ধরণের কষ্ট দিছ না। কোনো কিছু হলে আমাকে ফোন দিস। আর হিমু যা চায় তা দিছ।
>> আচ্ছা আপু।
চলো খেতে যাই।
অনেক খিদা লাগছে।
>> তোমরা দু'বোন এতো খেতে ভালোবাস কেন?
>> এই কি বলছ? (দু'বোন এক সাথে)
.
লেখা : ahmed himu ( মুরুব্বি)
No comments