আজ ১৪ দিন ধরে মেডিকেলে ভর্তি
আজ ১৪ দিন ধরে মেডিকেলে ভর্তি।খুব অসুস্থ! কি হইছে সেটা জানি না। মা-বাবাকে জিঙ্গেস করলে তারাও বলেনা আমার কি হইছে। দিন দিন শরীর আরো দূর্ভল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো বড় কোনো রোগ হইছে! বেশি দিন হয়তো আর বাঁচবো না। সব অাত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবরা একবার করে এসে দেখে তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছে। পরেরবার আর কেউই দেখতে আসেনি।
এর মধ্যে একজন শুধু ব্যতিক্রম। সজীব! ওর দায়িত্ব যেনো শেষই হচ্ছে না। প্রতিদিন দুইবার করে এসে আমাকে দেখে যায়। সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে একবার আসে আর ভার্সিটি থেকে ফিরে আবার আসে। ভার্সিটিতে থাকা অবস্থাও ৩/৪ বার আম্মুকে ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করে আমার অবস্থা কেমন। এসে আমার সামনে কাকতাড়ুয়ার মত দাড়িয়ে থাকে। বরাবরের মত আজও আমার পাশে কাকতাড়ুয়া মত দাড়িয়ে অাছে। আজ ওর চোখে পানি! ওকে কোনদিনও কাঁদতে দেখিনি। সব সময় হাসি খুশি থাকে। আমি ওর চোখে আমার ভবিষৎ দেখতে পাচ্ছি..
..
আমি মারা যাওয়ার পর ওর চোখের পানি আর নেই।সব শুকিয়ে গেছে।
আমার লাশটা দাফনের পর সবাই যার যার মতো চলে গেছে।তবুও যেন ওর দায়িত্ব শেষ হয়নি।
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বোকা কান্না করতে থাকে।
একসময় সবাই আমাকে ভুলে গেছে।কিন্তু ও আমাকে ভুলেনি।প্রায়ই কবরের কাছে এসে বলে, ভাল আছিস দোস্ত? জানিস আমি ভাল নেই।
তোর সাথে খালেক চাচার দোকানের চায়ের আড্ডা খুব মিস করি।আজও আমি দু'কাপ করে চা কিনি।একটা আমার জন্য আরেকটা তোর জন্য।
তোর কাপটায় ধোঁয়া উড়তেই থাকে।আচ্ছা ওই ধোঁয়াগুলোকি তোর কাছে পোঁছায়?
ছেলেটা আবার বোকা কান্না করতে থাকে।……
.
মাঝে মাঝে ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডায় হঠাৎ করে মন খারাপ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে বলে,জানিস আরাফাতকে খুব মিস করছি।……
.
কোন এক শীতের রাতে চাদর গায়ে এসে বলে,দোস্ত তোর শীত করেনা?
এই বলে ওর চাদরটা আমার কবরের উপর লম্বা ভাবে দিয়ে হঠাৎ পালিয়ে যায়।
.
বাস্তবে ফিরে এলাম। তখনো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ওকে ডাকলাম।
ও আমার পাশে এসে বসলো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
দোস্ত আমাকে এতো ভালবাসিস কেন?
সে কোন উত্তর দিল না।কিছু কিছু ভালবাসা মাত্রারিক্ত।সেগুলোর রং হয়না,উত্তর হয়না।
ওকে বললাম দোস্ত আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি?
ও আমার পাশে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে ওর পিঠ ভিজে যাচ্ছে।ওর অশ্রুজল তখন শুকিয়ে গেছে।
বন্ধু সবাই'ই হয় কিন্তু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারার মতো বন্ধু খুব কমই হয়।
বাঁচাটা খুবই জরুরী।যার এমন একটা পাগল বন্ধু আছে সে কখনো মরতে পারে না।
অন্তত খালেক চাচার দোকানে এক কাপ চা খেতে হলেও বাঁচতে হবে আমাকে।
ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা…
আরাফাত রুবেল(আদু ভাই)
No comments