ইচ্ছে বিয়ে
বাবা আকাশ তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি। তোমার বিয়ে দিবো। তোমার মায়ের শরীর টা ভালো যাচ্ছে না রেস্ট দরকার। মেয়ে খুব সুন্দর উচ্চ পরিবারের মেয়ে। শিক্ষিত। মেয়ে কে তুমি জানো চেনো সে আমার বন্ধুরই মেয়ে টুম্পা। তোমার কোন আপত্তি প্রশ্ন আছে?
বাবা আমি মানে হঠাৎ করেই বিয়ে এসব কি বলো!!
কোন কথা নয় আগামী ১৫ দিন পর বিয়ে হবে। ফাইনাল। বন্ধুরা রাজি তাদের কোন আপত্তি নেই।
তুমি বিয়ের প্রস্তুতি সেরে ফেলো।
বাবা আমি এ বিয়ে করতে পারবোনা! আমি টুম্পা কে বিয়ে করবোনা!!
মানে?? এই কি বলছো এইসব!! লজ্জা করছেনা আমার মুখের উপর কথা বলতে!" বিয়ে করবেনা টুম্পা কে তবে কি তুমিও প্রেম ট্রেম শুরু করেছো!
মান সম্মান জলান্জলী দিবে আমার!! আমি কখনো বরদাস্ত করবো না তুমি আমাকে যদি প্রত্যাখান করো!! কি নেই টুম্পার বাবার টাকা যশঃ খ্যাতি উচ্চ বংশীয় মর্যাদা!! তুমি এভাবে আমাকে অপমানন করতে পারো না!
বাবা আমি আপনাকে অপমান করার প্রশ্নই আসেনা!! আর আমার কারো সাথে প্রেম ভালবাসা অন্তরঙ্গ নেই!! আছে একটা ভালো লাগা আর সাম্যর সুর।
মানে কি? কি বলতে চাও তুমি? পরিস্কার করে কথা বলো!
বাবা লাভলী নাম মেয়েটির মেয়েটিও খুব সুন্দর। তার থেকে সুন্দর তার ব্যবহার আচরণ। কথা সুরে নম্রতার শীর্ষ স্হান। সে পড়াশুনা করে আমাদের শহরের কলেজে। আমরা একই বাসে করে কলেজে যাই। একদিন বাসের ভিতরে বখাটেরা তাকে অসহায় দূর্বল বলে তার উপর চেপে বসে বাজে ভাষা কটাক্ষ্য করে। লাভলী কে কাদতে দেখে আমি বাস দাড় করায়। তারপর বখাটে দের ভয় ভীতি প্রদর্শন করি এবং তাদের বাস থেকে নামিয়ে দিই। তারপর থেকে লাভলীর সাথে আমার পরিচয়। বাবা লাভলীর দুনিয়াতে কেউ নেই। সে হওয়ার পরেই তার মা মারা যায়। তার বাবার কোন
খোজ মেলেনি বেচে আছে না মরে তাও জানে না।
মামার সংসারে সে মানুষ হয়েছে। মামারা শুধু তাকে থাকতে শুধু দেয়। তার মামিরা তার জন্য মামার সাথে ঝগড়া করে। লাভলীর জন্য কোন খরচ করতে দেয়না! লান্ছনার সহিত লাভলী ওর মামার সংসারে টিকে আছে। লাভলীর খরচ লাভলী নিজে চালাচ্ছে। সে ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্রী। পড়াশুনার পাশাপাশি অনেক টিউশনি করে।।
দিন রাত সে পরিশ্রম করে। সে এস এস সি ও এইস এস সি তে মেধাবী তালিকায় পাশ করে। সে অনেক বড় হতে চায় বাবা। সে এমন পরিস্হিতে কারো কাছে মাথা নুয়া বেনা। কিন্তু দিন দিন তার চলা সমাজ রোধ করতে চাইছে। তাকে কটুক্তি করে সমাজের ঘৃন্যরা! এলাকার বখাটে কিট রা তাকে প্রস্তাব করে বিয়ের। জানালায় ফুল ছুড়ে।
তার মামা কে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে!
আমি এলাকার বখাটের বিরুদ্ধে শাশ্বত সংগ্রাম করে যাচ্ছি। যেনো পরিচর্যা ছাড়া বেড়ে উঠা ফুলটি কেউ মুচড়ে ফেলতে না পারে! লাভলী শুধু ফুলই নয় সে আলো সে সকল প্রতিকূল অন্ধকারে
একাই আলো জ্বালিয়েছে!! বাবা সে সামান্য মেয়ে না এ এক রত্ন! আর এ রত্ন আলো যদি সঠিক মানুষের কাছে না পড়ে না যায় তবে প্রদীপ নিভে যাবে। বাবা আমরা সবাই মুখে সাম্যর কথা বলি।
নীতি মানবতার কথা বলি। কিন্তু প্রাকটিক্যাল করিনা। আমরা দেখি যশঃ খ্যাতি অর্থ বংশ পরিচয়। তাহলে লাভলীরা কোথায় থাকবে কোথায় ওদের নিবাস! এদের আলো তে কারা
নিজেকে আলোর সামনে নিবে!! আমরা ধর্ষিতার জন্য প্রতিবাদ মিছিল করি প্লে কার্ড নিয়ে রাস্তায় নামি অথচ ধর্ষিতা কে বিয়ে করতে পারিনা! এ হলো শৃংঙ্খল মানবতা আমাদের। বাহ! ওরা কোথায় যাবে ওদের সমাজ কি আলাদা। ওরা কোথায় থাকবে বনে! বাবা আমি বিয়ে করবো ঠিক
করেছি লাভলী কে। তাকে আমার জীবন চলার আলোর দিশারী করবো। ফুলটির পাশে ছায়া হয়ে থাকবো যেনো ফুলটির সৌরভে সুরভিত হতে পারে
সমাজ। বাবা লাভলী সমাজ আগামীর নতুন কিছু এনে দিবে।
বাবা আকাশ তুমি আমার সম্মান টা উচু করে দিলে। আমি গর্বিত তোমার চিন্তা ধারায়। এমন আলোর কথা তুমি বললে যে আমার সে আলোতে যেতে এক্ষনি যেতে মন চাইছে! আকাশ তুমি আমাকে অনেক খুশী করেছো। আমার কোন বংশ অর্থ গৌরবের দরকার নেই। দরকার ঘরের আলো।
যে আলো জানালার বাইরে দিয়ে যাবে সমাজের দরজায়। ওদিকে মা এসে বলে শুনেছো টুম্পার বাবা ফোন করে বললো টুম্পা বিয়ে করবেনা। সে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। বাবা বললো তাহলে তো আকাশ আর লাভলীর বিয়েতে কোন ঝামেলা থাকলোনা। আমি কাল লাভলীর মামার সাথে তোমাদের বিয়ে পাকা করে আসবো। এ বিয়ে
হবে একটা সমাজের জন্য শিক্ষনীয় বিয়ে। সব মানুষ কে দাওয়াত করবো। যাও বাবা আকাশ এবার তুমি লাভলীর সাথে বিয়ের প্রস্তুতি সেরে ফেলো। ওদিকে আমার আদরের ছোট বোন বলে
উঠে কি মজা কি মজা ভাইয়া বিয়ে করবে। আমি। ভাবির সাথে মজা করবো।
এরপর আমরা সবাই হাসতে লাগলাম...।
No comments