Header Ads

নতুন মা


নীলিমা ম্যাডাম বাণিজ্য বিভাগের ক্লাশ নিচ্ছিল, অল্প বয়সী ম্যাডাম দেখে ছাত্রী নাকি ম্যাডাম বোঝা দুষ্কর ছিল।
.
ছাত্রী ভেবেই আমি ক্লাশ রুমে ঢুকে যায়।
পরে বুঝলাম উনিই অত্র কলেজের সব'চে সুন্দরী নীলিমা ম্যাডাম। রাবি থেকে অনার্স-মাষ্টার্স করে নামকরা শহরের নামিদামী কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
.
বিনা অনুমতিতে ক্লাশ রুমে প্রবেশ করায় আমাকে ক্লাশরুম ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীর সামনে ৩ বার কান ধরে উঠ-বস করতে হয়েছিল।
.
সবই ঐ সুন্দুরী ম্যাডামের ক্যালমা।
কলেজে যাতায়াতের সময় ম্যাডামের সাথে দেখা হত।
আমি হা করে ভেবলাম মত তাকিয়ে থাকতাম।
.
ম্যাডামের সাথে মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা হত।
জানতে পারলাম ম্যাডাম অবিবাহিত।
চাকুরীর বয়স ও কম।
.
কলেজের প্রথম দিন থেকেই ম্যাডামের উপর রাগ।
যতই হোক কান ধরে উঠ বস করা তো আর যেনতেন অপমান না।
.
ম্যাডামের কন্টাক্ট নং যোগাড় করলাম কলেজের লেকচারার লিস্ট থেকে। ঐ দিন রাতেই কল কররে হুমকি ধামকি দিলাম। ম্যাডাম বোধ হয় ভয় পাননি।
.
পর দিন অধ্যক্ষ স্যার সহ নীলিমা ম্যাডামের পদধুলি পড়ল প্রথম ক্লাশেই। ব্লাক বোর্ডে আমার মোবাইল নং টা সুন্দর করে লেখা হল!
অধ্যক্ষ স্যার সকলের উদ্দেশ্যে বললেন "নং টা কার"
ক্লাশ রুম নিরব! যেন নং নং নয় এলিয়েনের ছবি কেউ ই চিনেনা।
অথচ আমার নং ক্লাশের দু-দশের মুখস্থ।
.
স্যার আবার বললেন"নং টা কার সামনে উঠে এসো" না হলে নং টা পুলিশ ভেরিফাই করা হবে"
সর্বনাশ! আমার পিছনে তো বাশ।
.
আমি " স্যার....."
পুরো ক্লাশ রুম অবাক!
আমীর! বেটা করেছে কি?
ওর নং টা তো সকলে জেনে যাবে।
.
স্যার " তোমার বাবাকে কল দাও, এখুনি কলেজে এসে আমার সাথে কথা বলতে বল"
আমি "স্যার প্লিজ এমনটা করবেন নাহ্" আমি ক্ষমা প্রার্থী!
ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে এবারের মত মাপ করুন।
.
মেয়েদের মন সহজে গলে!
ম্যাডাম স্যার কে বলল "স্যার আমীর কে মাপ করে দেওয়া যাক" & " ও তো ওর দোষ স্বীকার করেছে, সরি ও বলেছে"
.
সুন্দুরী ম্যাডামের কথা স্যারও ফেলতে পারলেন নাহ্
আমার কেস খালাস!
তবে ম্যাডামের উপর ২নং রাগ টাও জমা হলো।
.
কান ধরে উঠবস করাল, স্যার কে দিয়ে বকা শুনাল।
নাহ্ আর নাহ্হ্! এর শোধ নেবো, তবে অন্য ভাবে।
সে দিনের পর থেকে কলেজে যায়নি ১মাস।
শুনেছি নীলিমা ম্যাডাম নাকি "আমীর" কে খুজেছিল।
.
১ মাস কলেজে যায়নি, তবে দিনে ১৮ ঘন্টা ফেসবুকে সময় দিয়েছি! সুশান্তপালের প্রতিটি পোষ্ট মন দিয়ে পড়েছি। মনে রাগ এনেছি।
.
কি জানি মনে করে ম্যাডামের নং ফেসবুকের সার্চ বক্সে টাইপ করে সার্চ দিলাম।
অমনি চলে আসল "Nilima Chowdhury" ম্যামের প্র:পিক দেখে আমি তো অবাক!
.
দেরি না করে রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখলাম।
সাথে ছোট্ট একটা মেসেজ "আমি আমীর, আপনার হুমকি দাতা, চায়লে লিস্টে রাখতে পারেন, ফেসবুক এক্সপার্ট, এড করে নিবেন"
.
ম্যাডাম কে রিকু, মেসেজ দিয়ে ২মাস ফেসবুকে লগইন করিনি। সামনে টেস্ট পরীক্ষা বলে কথা।
তারপর থেকে ম্যাডামের সাথে দেখা হত কম।
হলেও ম্যাম কেমন করে যেন তাকাত।
.
টেস্টের রেজাল্ট দিবে কাল।
ভিতরে টানটান উত্তেজনা! সকালে কলেজে গেলাম, রেজাল্ট শীটে আমার রোলটা মাঝ বরাবর। ৪.০০ এসছে।
.
মনে আনান্দ নেই, তবে কস্টও নেই।
রাতে ফেবুকে ঢুকে ম্যাডামের টেক্সট দেখে চোখ তো বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
ম্যাডাম লিখেছে" আমি লিস্টে কোন ছাত্র এড করিনা, আর তোমার মত এক্সপার্ট আমার দরকার নেই, আমিও কম নই"
.
২ বছরের এইচ এস সি জীবনে কলেজের সব'চে সুন্দুরী ম্যাডামের নিকট হতে ৩য় বারের মত ছ্যাকা খেলাম।
বুঝতে পারছিলাম না কি করব?
রাগে রাগে ম্যাডামের আই ডি টা চাঁন্দে পাঠায়ছি।
.
সে দিনের পর থেকে ম্যাডামের চিন্তা মাথায় আনিনি। কিছুদিন পরে ই বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা। পড়েছি আর পড়েছি
.
পরীক্ষার আগের রাতে ম্যাডাম কে কল করে দুয়া চেয়ে নিছিলাম। ম্যাম বলল সকালে এক্সাম সেন্টারে ৩০৫ নং রুমে দেখা করতে।
পরীক্ষার দিন সকাল করেই ৩০৫ নং রুমে গেলাম।
দেখলাম ম্যাডাম আর সুনীল স্যার। ম্যাম আমাকে দেকে কাছে আসল। ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করল।
.
৩ টা কলম, ১ টা স্কেল, আরও কিছু পরীক্ষা সামগ্রী।
ভাবছিলাম ম্যাম কে জড়িয়ে ধরে একবার কেঁদে নিই।
ম্যাম মাথায় হাত বুলিয়ে বলল "আমি তোমার সাথেই থাকব, নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিবা"
.
ছল ছল চোখে এক্সাম হলে পৌছালাম।
প্রথম পরীক্ষা বেশ হলো।
দেখতে দেখতে দেড় মাসে পরীক্ষা শেষ হলো।
এবার এডমিশন কোচিংএর পালা।
.
ঢাকা একটা সেন্টারে ভর্তি হলাম। ভালই চলছিল লেখাপড়া।
২ মাস পরে বোর্ডের রেজাল্ট বের হল।
৫.০০ আসছিল।
.
খুসি হইনি! কারন আমাকে পাবলিক ভার্সিটে চান্স পেতে হবে। পড়তে হবে অনেক। খুসি তো পরেও হওয়া যাবে।
.
ঢাবি, রাবি, সহ ৪ টায় পরীক্ষা দিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ্! ঢাবিতে টিকেছি।
ম্যাম কে কল করলাম।
সব বললাম, সে খুসি হলো। কতটা সেটা জানিনা।
.
অনার্স - মাস্টার্স শেষ হতে প্রায় ৬ বছর লেগে গেলো।
ম্যাডামের সাথে মাসে দুয়েক বার কথা হতো।
ম্যাম বিয়ে করেছে! BCS ক্যাডার (শিক্ষা) স্বামী।
শুনে খুসি আমি।
.
এতকিছুর ভিতরেও ম্যাডামের দেওয়া ৩টা ছ্যাকার কথা ভুলিনি।
.
৩৪ তম BCS দিলাম। মনে জোর ছিল টিকে যাবো। হ্যাঁ! টিকেছিলাম।
হয়ত এটাও ম্যাডামের দুয়া'য়!
.
তবে আমি প্রশাসনে! শিক্ষা ক্যাডার নয়।
'ক' মাসের মধ্যেই জব মিলল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রংপুর)
শুনেছি ম্যাডামের বিয়ে হইছে বগুড়াতে! সেও কলেজ ট্রান্সফার করিয়েছে!
.
এতদিনে হয়ত ম্যাডাম আমার সব খবর শুনেছে!
তবে আমার ফোনে কল তো দেয় নি।
দিবেই কিভাবে আমি তো সীম পাল্টিয়েছি।
.
আজকাল আর কাজের চাপে ফেসবুকে সময় দেওয়া হয়না, দেবো কিভাবে আমি তো সরকারের কেনা আমলা গোলাম!
কয়েক মাস পরে ফেবুকে লগইন করে আমিতো অবাক!
সেই চির পরিচিত নামের মেসেজ রিকুয়েস্ট সহ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট!
.
সাংঘাতিক!!!
.
ম্যাডাম কে আমার নতুন নং দিলাম।
নিমন্ত্রণ করলাম আমার নতুন বাংলোতে!
ম্যাডাম একা এসছিল আমার সাথে দেখা করতে..
স্বামীকে সাথে নেননি।
.
ম্যাডাম আসার পথে কোন সমস্যা হয়নি তো?
আমি বললাম।
ম্যাডাম "নাহ্ তবে"
তবে কি?
" তোমার মেইন গেটে যে একজন গার্ড! সে পরিচয় চাইল। বিভিন্ন ধরনের জেরা করছিল।
.
ওহ্ সরি ওরা ওমনই মাপ করবেন
ওটা ওদের কর্তব্য!
.
ম্যামের সাথে অনেক সময় ধরে কথা বললাম।
ম্যামে শেষ কথা ছিলঃ
" তুমি হয়ত আমার করা ৩টি আপমানের কথা আজও মনে রেখেছ!
তোমাকে কান ধরে উঠ বস
স্যার কে দিয়ে বকা
ফ্রেন্ড রিকু রিজেক্ট
তুমি হয়ত জানোনা আজ তোমার এত উন্নতির পিছনে আমার ৩টি অপমান মুখ্য ভাবে কাজ করেছে।
বিষয় তুমি কিভাবে নেবে জানিনা।
.
ম্যাডাম বলল " বিয়ে করোনি হয়ত?
আমি " নাহ্ "
ম্যাডাম " তোমার জন্য একটি মেয়ে দেখেছি, আমাদের কলেজে অধ্যক্ষ স্যারের মেয়ে, বর্তমান কুয়েটে আছে"
.
ম্যাডাম " আমি জানতাম তোমার মা নেই বাবা তো বৃদ্ধ"
তোমার মতামত থাকলে মেয়েটা দেখে রাখতে।
,
আমি ম্যাডাম কে আর একটিও কথা বলতে না দিয়ে ম্যামকে জড়িয়ে ধরে সুখের কান্না কাঁদতে লাগলাম।
আর বললাম আপনি আমার নতুন মা।
|
লেখাঃ মোহাম্মাদ আমীর হোসাইন খাঁন

No comments

Powered by Blogger.