Header Ads

প্রাইভেট চাকরি!


বাবা নিশাত কেমন আছিস বাবা?
জি মা ভালো।তোমার শরীর কেমন এখন?
আমি ভালোআছি,শুধু মাঝে-মাঝে পেসারটা একটু বেড়ে যায়।
ঔষধ ঠিক মতো খাওনা তাইতো?
না ঔষধ ঠিক সময় ই খাই তারপর ও কেনো জেনো পেসারটা ঠিক থাকে না।
তুই যদি একটা চাকরি পেতিস তাহলে আমার আর কোনো চিন্তা থাকতো না।
আমিতো চেষ্টা করছি মা চাকরি হয়ে যাবে তুমি চিন্তা করোনা।
সবসময় শুনতাম বাবলুর থেকে তুই ভালো পাস করছোস।এইদিকে দেখ বাবলু একটা চাকরি পেয়ে বিয়ে-সাধী করে সন্তানের বাবা হয়ে গেলো। তুই একটা কিছু কর বাবা।
(বাবলুর বাবার অনেক টাকা,রেজাল্ট ভালো না হলেও টাকার জন্যে চাকরিটা পেয়ে গেছে সে তাও সরকারি চাকরি।
না মাকে এইসব কথা বলা যাবে না। মা কষ্ট পাবে)আমি চেষ্টা করছি মা।কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে তুমি খেয়ে নিও রাখছি।
মাথাটা চিন্তায় ভন-ভন করছে।সরকারি চাকরির বয়স শেষ।এদিকে বোন বড় হয়ে যাচ্ছে তার বিয়ে দিতে হবে।না কিছুই আর ভালো লাগছে না।
মাকেতো বলে দিলাম কিছু একটা করবো কিন্তু কি করবো সব খানেই দুর্নীতি।টিউশন করে আর কতো দিন এভাবে চলবো।
এদিকে যেখানেই CV জমা দিচ্ছি কোথাও থেকে ডাকছে না।
রুমমেট এর কাছ থেকে একটা সিগারেট চেয়ে নিলাম।আমি সিগারেট খাই না তবে অনেক টেনশন এ থাকলে তখন রুমমেট এর থেকে মাঝে-মাঝে নিয়ে খাই।ও বলেছিলো এতে নাকি টেনশন কমে।
তবে আমার তেমন কোনো ফল হতো না।তারপর ও নিলাম সিগারেট টা।
দুইদিন পর এক জায়গা থেকে ডাক এলো।রেডি হয়ে সকাল সকাল বেড় হয়ে পরলাম।
নাহ কপালটা ভালো এবার চাকরিটা হয়ে গেলো।ভালো একটা কম্পানিতে প্রাইভেট চাকরি।বেতন ১৫০০০ টাকা পরে বেতন আরো বাড়াবে শুনলাম।
শনিবার থেকে চাকরিতে জয়েন করত বলল।
আজ আমি অনেক খুশি মাকে ফোন দিলাম।
মা একটা খুশির খবর আছে।আমি একটা চাকরি পেয়েছি।
যাক বাবা এতোদিনে ঈশ্বর আমাদের কথা শুনছে।কতো টাকা বেতন বাবা?
আপাততো ১৫০০০ টাকা, তুমি চিন্তা করো না পড়ে আরো বাড়াবে বেতন।
এবার তোর আর তোর বোনের বিয়ে দিতে পারলেই আমার শান্তি।
হুমম আস্তে আস্তে সব হবে।আচ্ছা মা রাখছি ভালো থেকো।
আজ শনিবার চাকরির প্রথমদিন।অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।পোষাকটা পড়ার সময় মনে হলো ২ টাকার চাকরি করতে ৫ টাকার ভাব নিতে হচ্ছে।
যাইহোক অফিসে পৌছালাম।প্রথম দিনেই আমার ওপর দিয়ে এমন কাজের চাপ গেলো তাতে আর বুজতে বাকি রইলো না যে আজ শনিবার থেকে আমার কপালে শনি লাগলো।
প্রতিদিন ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে অফিস যাই আর ফিরতে ফিরতে অনেক রাত। এতো কাজ করে ও বসদের কথা শুনতে হয়।মাঝেমাঝে প্রাইভেট চাকরিটাকে সৎ মায়ের মতো মনে হয়।
বাবা নিশাত তুই কতো দিন হলো বাড়িতে আসিস না।তকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে।
কি করবো মা,অফিস থেকে তো ছুটি পাইনা।আমার ও তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।বড় একটা ছুটি পেলেই বাড়িতে আসবো।
দিনের পর দিন যায় বড় কোনো ছুটি নেই।
আমার তো মনে হয় পারলে শুক্রবার ও প্রাইভেট কম্পানি গুলো কাজ করিয়ে নিতো।
এতো কাজ করার পর ও বসের কাছে শুনতে হয় নিশাত সাহেব এইভাবে কাজ করলে তো আপনার চাকরি থাকবে না।আপনার মতো ইম্পলিয়ার নিয়ে কাজ করলে আমার শুক্রবার ও অফিসে থাকতে হবে।
সত্যিই তখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়।আর মনে মনে ভাবতে থাকি এর নাম প্রাইভেট চাকরি।এর থেকেতো কুলি কাজ করা ভালো।
যাইহোক চাকরির ৬ মাস পর আজ প্রথমবার বেতন বাড়াবে।আজকে একটু ভালোই বোধ করছি।
কিন্তু সব সুখে পানি, মাত্র ৩০০০ টাকা বাড়ানো হলো।শুনেছিলাম ৫০০০ টাকা বাড়াবে।
এদিকে বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
ছেলে দেখতে শুনতে ভালোই।তবে আমার মতো প্রাইভেট চাকরি করে না।
সল্প শিক্ষিত হলেও আত্মকর্মসংস্থান আছে।
আমিও রাজি হয়ে গেলাম আর যাই হোক ছেলে মোটামুটি বড় পরিবারের সন্তান।বোনটা ভালোই থাকতে পারবে।
কিন্তু আমার এমন ভাগ্য নিজের বোনের বিয়েতে দু-দিনের বেশি ছুটি কাটাতে পারলাম না।
চাকরির আজ প্রায় দেড়বছর হতে চলল।
মা মনে করিয়ে দিলো যে আমার ও বিয়ে করা উচিত।বয়সতো অনেক হলো।আমার সাথের সব বন্ধুরাই বিয়ে করে ফেলেছে।কম-বেশি সবার ই সন্তান ও আছে।আর এদিকে আমি বিয়েই করিনি।
আমার জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু হলো।
কিন্তু এইখানেও সেই একই তকমা লেগে আছে।সব মেয়ের বাবারাই প্রাইভেট চাকরিজীবীর কাছে তাদের মেয়ে বিয়ে দিবে না।
আমিও ভাবতে থাকি ঠিক ই তো আমি ও আমার মেয়ে দিতাম না।কিন্তু বিয়ে তো করা লাগবে অনেক বয়স হয়েছে।
অনেক খুঁজে আধাসুন্দরি একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হলো।
এদিকে অফিসের কাজের চাপ বেড়েই চলেছে।আর বিয়ের পর বউয়ের বায়না সেতো নিত্য বস্তুু।
সব কিছুই অসহ্য লাগছে।নাহ লেখা-পড়াটা না করলেই ভালো হতো।এতো মানসিক চাপ আর নিতে পারছিনা।
আমিও ভাবতে থাকি তার বায়না করাতো কোনো ভুল না।বিয়ে হলে বরের সাথে প্রত্যেকটা মেয়েই দূরে কোথাও ঘুড়তে যেতে চায়।আমার ও তো ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি নিরুপায়।সল্প বেতনে গাধার খাটনি খেটেও বড় কোনো ছুটি নেই।
ভাবতে ভাবতেই আরো দু-বছর পেড়িয়ে গেছে টেরই পাই নি।
ও হ্যা আমার একটা ছেলেও হয়েছে।
এখন থেকেই ভাবছি ওকে আর আমার মতো প্রাইভেট চাকরি করতে দিবো না।
যেভাবেই হোক একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো।তাই এখন থেকেই ছেলের জন্য টাকা জমাই।কারন আমি পদে-পদে জেনেছি ঘুষ নামক বস্তুটি ছাড়া সরকারি চাকরি পাওয়া যায় না।
আমার চাকরির ৫ বছর পূর্ন হয়ে গেছে।
বেতন এখন ২৫ হাজার টাকার কিছু উপড়ে।
আমার ছেলে আমাকে ছাড়াই হাটতে শিখে গেছে।সে এখন কথাও বলতে পারে।
একদিন হঠাত দেখলাম আমার ছেলে আমাকে দেখিয়ে আমার বউকে বলছে,
এই লোকটা কে মা?আমার ছেলেই অবশেষে আমাকে চিনতে পারছে না।
চিনবেই বা কি করে।অফিসে যাই সেই সকালে যখন ছেলে ঘুমিয়ে থাকে।আর রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন ওতো ছেলে ঘুমায়।না চেনাটাই তো স্বাভাবিক।
তখন একটু হাসলাম আর ভাবতে লাগলাম যেখানে চাকরি করলে ছেলে বাবাকে চিনতে পারে না তার নামই প্রাইভেট চাকরি।

No comments

Powered by Blogger.