টিউশনির টিচারের কান্না
যারা টিউশনি করে তারা সত্যিই হতভাগা।
নিতান্ত কোন বেকায়দায় না পড়লে কেউ অন্যের দরজায় ভিখারীর মত কড়া নাড়েনা।
নিতান্ত দায় না ঠেকলে কেউ কোচিং সেন্টার খুলে বসেনা।
হ্যাঁ টিউশনি একটা ব্যবসা যা থেকে প্রচুর Income করা possible.
কিন্তু যারা এটা করে তারাই শুধু জানে কি করে,কত অসম্মানিত হয়ে এ জীবন চালনা করতে হয়।
এইতো আজই একটা বোনের কাছ থেকে শুনলাম,সে যে বাসায় টিউশনি করে তাদের প্রতিটা রুমের সাথেই বাথরুম সংযুক্ত আছে।তারপরও ছাত্রীর বাবা প্রতিদিন মুখে জ্বলন্ত সিগারেট ধরে লুঙ্গী উচু করতে করতে এসে বোনটির পড়ানোর রুমের পাশের বাথরুমে ঢোকে।লোকটার বিকৃত মানসিকতার কথা তাঁর স্ত্রী টের পেয়ে বোনটিকে বলেন #ম্যাডাম চিন্তা করবেননা আমি থাকব ককাছাকাছি, যতক্ষণ আপনি আমার বাড়িতে থাকবেন।
এটা কোন সমাধান নয়। তবু অভাগী স্ত্রী আর একজন মায়ের এর বেশী করার কিছুই নেই।স্বামীর বিরুদ্ধতা করার সাহস সবার থাকেনা।সন্তানের মুখ চেয়ে মা এর বেশী কিছু করতে পারেনা।
রইল বাকি টিচার বোনটার কথা।পিতৃমাতৃহীনা বোনটি আমার টিউশনি ছাড়লে খাবে কি??
অতপর দিনের পর দিন এই নারীত্বের গোপন অপমান।
প্রিয় পাঠক,#শুধু শরীরে হাত লাগালেই কি মেয়েদের ক্ষতি করা হয়??
আর কোনভাবেই মেয়েদের অপমান হয়না???"
সেদিন শুনলাম একটা বোনকে টিউশনির টাকা দিচ্ছেনা।টিউশনির বাসার লোকের প্রশ্ন মেয়েমানুষ অত টাকা দিয় কি করবে?
সংসারতো চালাতে হয়না।
কিন্তু কে বোঝে এই সামান্য কয়টা টাকা দিয়েই মাস চালাতে হয়।
সারাটাজীবন আমরা যারা টিউশনি করি তারা হয়ত মনেও করতে পারিনা বৃষ্টির দিনে কম্বল বা কাথার স্বাদ কেমন??
যখন সবাই দিবাসুখ নিদ্রায় মগ্ন তখন আমাদের ছুটতে হয় কারোনা কারো বাসার কলিংবেল চাপতে।
সেদিন আমার বন্ধু সুব্রত মল্লিক কলিংবেল চাপতেই ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো #দরজার ও পাশের ভিখারীকে দুটো টাকা দিয়ে বিদায় কর #
এরকম আমার বেলায়ও হয়েছে।বোধকরি অনেকের বেলায় একই ঘটনা ঘটেছে।
বন্ধুটি যখন পড়াতে বসে তখন ছাত্রীর মা ঘন ঘন এসে তদারকি করেন যাতে ছাত্রীটি প্রেমপাঠ না পায়।সচেতন মাকে অনেক ধন্যবাদ বটে।তবে সবাই একরকম হয়না। অন্যকে সন্দেহ না করে নিজের কন্যাটির সুশিক্ষা দিন।সিরিয়াল না দেখে নৈতিকতা শেখান মেয়েকে।সরাসরি অপমান না করে দরকারে আড়ালে নজর রাখুন।
জনৈক ভদ্রলোক কোচিং করাচ্ছেন।
কারন বেকারত্ব তাকে এটা করতে বাধ্য করেছে। মাস শেষে অনেক টাকা হবে।তা দিয়ে সংসারের খরচা চালাবেন।হায় বিধি
স্টুপিড স্টুডেন্টস বাড়ির থেকে টাকা এনে মনের মানুষের আবদার পুরোন বা কসমেটিক্স কিনছে। কিন্তু কোচিং এর টাকা পরিশোধের নাম নেই।
সেদিন আমার এক পরিচিতজনের কাছে জানলাম চারমাসের বেতন বাকি তবু স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে মাত্র একমাসের টাকা দিয়েছে।এদিকে তার ছোটবোনের বিয়ে।বড়বোন হিসেবে ধার করেই এখন ছোটবোনের বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আজ অনিন্দিতাকে বাসা ভাড়া দিতেই হবে।স্টুডেন্টের বাসায় বলে বসলো ম্যাডাম সামনের মাসে একসাথে টাকা নেন।
কাকলীর শরীরটা ভাল নেই।ডাক্তার দেখাতে হবে দ্রুত।অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে টিউশনির বাসায় গিয়ে জানতে পারে এ সপ্তাহে টাকা হবেনা।
শংকরের মা অসুস্থ্য। সংগীতার বৃদ্ধ বিপত্নীক বাবা হাসপাতালে। টিউশনির বাসার টাকা না দিয়েই বলা হল কামাই করলে টিচার পাল্টানো হবে।
আমার কথাই বলি এবার, গতমাসে জ্বর ও বাবার মৃত্যু বার্ষিকির জন্য দুদিন টিউশনির বাসায় যেতে পারিনি বলে দামী টিউশনিটা আমার হাতছাড়া।ওযুহাত একটাই মেয়েরা মাসে মাসে অসুস্থ্য হয়।অত কামাই করলে তাদের বাচ্চা ভাল রেজাল্ট করবে কি করে????
যুক্তি সত্যি। যদিও আমার অন্য প্রোব্লেম ছিল।
আমরা যারা টিউশনি করি হোক সে ছেলে বা মেয়ে তারা বড় নিরুপায় হয়ে সময় বিক্রী করি।
একজন প্রস্টিটিউট যখন এক ঘন্টা সময় কারো দেয় তখন তার পারিশ্রমিক পাবার সময় অন্তত এটা শোনে #বড়ই আনন্দ দিলি।
আর শত পরিশ্রমের পরও খুব কম ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা বলেন #তোমার জন্য আমার বাচ্চাটা ভাল রেজাল্ট করেছে।
তবুও আমাদের টিউশনি করে যেতে হয়।কারন লেখাপড়া শেষ করে একসময় বাড়িতে হাত পাততে সত্যিই লজ্জাে করে।
অনেক পরিবারের দেয়ার ক্ষমতা থাকেনা।
অনেকেরতো পরিারই থাকেনা।
রচনা ও উপস্থাপনায় :-শিবানী মন্ডল।
No comments