Header Ads

অজান্তে ভালোবাসা

স্নিগ্ধ ঢাকা ভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ডিপারটমেন্টের ছাত্র। খুব দুষ্ট প্রকৃতির হলেও ক্লাসের সময় খুব মনযোগী থাকে। ক্লাসের সবাই ওকে ভালো করেই চিনে। ওর একটা ভালো গুন আছে ও সবাইকে অনেক হাসাতে পারে যেটা সবাই পারে না। মাত্র একমাস হল ওদের ক্লাস শুরু হয়েছে। সবাই স্নিগ্ধ কে ভালোভাবে চিনলেও ও সবাইকে এখনও ভালোভাবে চিনে না। টি এস সি তে আড্ডার পর সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরছিল স্নিগ্ধ । বাহিরে এসে দেখে অনেক বৃষ্টি। বাসে বসে আছে স্নিগ্ধ । কিছুদুর যেতে না যেতেই অনিক খেয়াল করল ওর পাশে একটি মেয়ে বসে আছে। বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে গেছে মেয়েটা। মেয়েটার দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ দেখলো মেয়েটি ওর ক্লাসমেট। ওর নাম নাদিয়া। বাসের ভিতর এক লোক রুমাল বিক্রি করছিল। স্নিগ্ধ একটা রুমাল কিনে নাদিয়াকে দিয়ে বলে ভালোভাবে মাথাটা মুছে নিতে। নাদিয়া অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। রুমালটা নিয়ে স্নিগ্ধ কে ধন্যবাদ জানায় নাদিয়া। স্নিগ্ধ মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলতো না। নাদিয়া কে চিনলেও ক্লাসে ওর সাথে কথা বলা হয়নি স্নিগ্ধের। বাসেও তেমন কথা হয়নি ওদের। কিছুক্ষণ পর বাস থামতেই স্নিগ্ধ কে বিদায় দিয়ে বাস থেকে নেমে যায় নাদিয়া ।
পরদিন সকালে ক্লাসের ফাকে স্নিগ্ধর পাশে এসে বসে নাদিয়া। ওদের মধ্যে অনেক কথা হয়।গতকালের ঘটনারর জন্য আবার ধন্যবাদ দেয় নাদিয়া। তারপর স্নিগ্ধের ফেসবুক আইডি নেয় নাদিয়া । এভাবেই শুরু হয় ওদের বন্ধুত্ব। তারপর থেকে নাদিয়ার বেশিরভাগ সময় কাটতো স্নিগ্ধের সাথে চ্যাট করে। সারা রাত দুজনের চ্যাট হতো। ক্লাসেও ওরা একসাথে বসতো। স্নিগ্ধর ছোট খাটো দুষ্টুমি, সবাইকে হাসানো, এগুলো ওর খুব ভালো লাগতো। ক্লাসের পর ওরা একসাথে ঘুরতে যেত। কখনাও টি এস সি,কখনো কার্জন হল,কখনও বা শহিদ মিনারে। এভাবেই কেটে যায় কয়েক মাস,শুরু হয় পরীক্ষা। দুজন ভালোভাবে পড়াশুনা করে। এক মাসের মধ্যে রেজাল্ট দেয়। স্নিগ্ধ ১ম হয়। নাদিয়া ও ভালো করে।এরপর থেকে কোন টপিক না বুঝলে স্নিগ্ধকে ফোন দিতো নাদিয়া। এভাবেই শুরু হল ওদের ফোন আলাপ। যখন নাদিয়ার মন খারাপ থাকতো স্নিগ্ধ ফোন করে ওকে হাসাতো। ধিরে ধিরে ওদের দুজনের প্রতি দুজনের ভালো লাগা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কেউ কাউকে কিছুই বলে না। নাদিয়ার সাথে যখনই স্নিগ্ধের দেখা হত তখনই স্নিগ্ধ ওকে চকলেট দিত। কারণ নাদিয়া একদিন স্নিগ্ধকে বলছিল চকলেট ওর অনেক প্রিয়। তাই স্নিগ্ধ প্রতিবার চকলেট দিত এভাবে অনেকদিন চলার পর স্নিগ্ধ ভাবে এবার নাদিয়াকে ওর ভালোবাসার কথা বলবে। তাই সে নাদিয়া কে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন বন্ধ পায় । তারপর আরও কয়েকবার ফোন করে কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ পায় । স্নিগ্ধ ভাবে পরদিন ক্লাসে সব বলবে কিন্তু পরদিনও ক্লাসে আসে না নাদিয়া। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ক্লাসে আসে না নাদিয়া। ফোন ও যথারীতি বন্ধ। এদিকে স্নিগ্ধের মন ছটফট করতে থাকে। নাদিয়ার বন্ধুদের কাছ থেকে ওর ঠিকানা নিয়ে বাসায় যায় স্নিগ্ধ। ওদের বাসায় কাজের মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না। নাদিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো ও এক সপ্তাহ ধরে হসপিটালে ভরতি। একটা মারাত্মক বাস দুর্ঘটনায় ওর এক পা পজ্ঞু হয়ে গেছে। মুখে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় চেহারা নস্ট হয়ে গেছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই হসপিটালে যায় এবং দেখে বেডে শুয়ে আছে নাদিয়া। ঘুমিয়ে আছে সে। নাদিয়াকে এই অবস্থায় দেখে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পরে স্নিগ্ধের। নাদিয়ার পাশেই অনেকক্ষণ বসে ছিল। নাদিয়া চোখ খুলে দেখে স্নিগ্ধ ওর পাশে বসে আছে। কিছু যেন বলতে চায় ওর নি:স্পাপ চোখ দুটো। দুজনের চোখেই পানি কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। হুট করে নাদিয়াকে প্রপোজ করে বসে স্নিগ্ধ। নাদিয়া অবাক হয় এবং বলে দেখ আমি এখন পজ্ঞু। আমি তোমার জীবনে বোঝা ছাড়া আর কিছুই হতে পারবো না আমাকে ভুলে যাও। স্নিগ্ধ রেগে যায় এবং বলে আমি তোমার শরীরকে না তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যেমনই হও আমি তোমার সাথে বাকি জীবন পার করতে চাই এই কথা বলে নাদিয়ার হাত আকড়ে ধরে। নাদিয়া স্নিগ্ধেরকথাটা শুনে কেঁদে ফেলে এবং ভালোবাসি তোমাকে এই বলে শক্ত করে ধরে থাকে নাদিয়া .........
এই ভাবে বেঁচে থাকুক হাজারো ভালোবাসা।।।
লেখক:আকাশ

No comments

Powered by Blogger.