Header Ads

বেসুর গলা

 ছোট বেলা থেকে গানের প্রতি আমি একটু দুর্বল। খুব ইচ্ছা ছিল।একজন গায়ক হবো। এজন্য নানার কাছে গান শেখার জন্য বহুত কাঠখড় পোড়াইছি। আমার নানা কোন নামিদামী গায়ক না হলেও,তার গানের গলাটা সুন্দর ছিল।আর গানের ভালো একজন শিক্ষকও ছিলেন। এজন্য আমার পাঁচ বছর বয়সে নানা বাড়ি গিয়েছিলাম।গান শেখার জন্য। প্রথম প্রথম কিছুদিন নানা নানুর আদর পেয়েছিলাম।গান শেখানোর চাপ দেয় নি আমাকে। সে কদিন দেখতাম কারা কারা গান শিখতে আসতো সকালে। আর দেখতাম সবাই মুখ বিকৃতি করে এ্যা...আ...ও....ই...উ... আজব ভাবে শব্দ করে। অনেক হাসতাম এগুলো দেখে।ভাবতাম কৃমিতে খোচে মনে হয়। কারন আমি ছিলাম চিনির পোকা। এজন্য আমাকেও কৃমির উপদ্রব সহ্য করতে হতো!! তখন ওরকম করতাম!! তাই হাসতাম!! পরে জানতে পেরেছিলাম অমন করে সকালে গলা ভাজতে হয়।মানে গলা ক্লিয়ার করে। কিছুদিন পর আসলো আমার পালা!! বহুত আদর যত্ন পেয়েছি।এবার গান শেখার পালা। সকালবেলা নানা গান শেখাতো। প্রথম প্রথম শেখাতো, "সা...রে....গা....মা...পা...দা...নি...সা.." কিন্তু আমি বলতাম, "ওরে মামা পাদে নিসা" নিসা ছিল আমার মামাতো বোন। ও ক্ষেপে গিয়ে আমার সাথে চুল টানাটানি বাধিয়ে ঝগড়া শুরু করতো। তারপর ওই লাইন বাদ দিয়ে অন্য গান শুরু করলো!! "কলো কলো ছলো ছলো, নদী করে টলমল" আমি বলতাম --এ গান আমি শিখবো না..!!!(আমি) -- কেন??(নানা) -- নদীর গান আমি গাইবো না।আমি সাতার জানি না!! অবশেষে অন্যগান ধরলো!! "ও ছকিনা,গেছ কিনা ভুইলা আমারে.... আমি এখন রিকশা চালাই ঢাকার শহরে" আমি বলতাম এটাও শিখবো না। আমি রিকশা চালাবো না।সাইকেল চালাবো!!! এরকম প্রতিটা গানে অযুহাত দিতাম।শেষে নানা রেগে গিয়ে আমাকে বাবা মায়ের কাছে পাঠিয় দিল!! সেখানেই আমার গান শেখার ইতি ঘটলো!! কিন্তু সিঙ্গার না হতে পারলেও আমি ছিলাম ভালো একজন বাথরুম সিঙ্গার। বাথরুমে গেলেই মনের কোনে আবেগের জোয়ার আসতো। আবেগে গান ধরতাম। কিন্তু মনে হয় এখন সেটাও আর গাওয়া হবে না। পাশের ফ্লাটের আন্টি নালিশ করছে আম্মুর কাছে। আমার বেসুর গানের জ্বালায় তাদের নাকি এই নিয়ে তিনটে ইটালিয়ান কুত্তা পলাইয়া গেছে,আমার বেসুর গলার গানের হাত থেকে বাচতে!! তখন নিজেকে জালিম মনে হল। আমিতো ভাবতাম কুত্তাগুলা আমার গান পছন্দ করে। নাহলে আমি গান শুরু করলে আমার সাথে ঘেউ ঘেউ করে গলা মিলাতো কেন!! কিন্তু পরে বুঝলাম। গান পছন্দ হইছে এজন্য না। আমার গানের গলা পছন্দ হইছে এজন্য না,আমার গানে বিরক্ত হয়ে শেষে টিকতে না পেরে ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানাতো। এতো গেল কুত্তার কাহিনী। আমার বাসার পাশে একটা নারিকেল গাছ ছিল।সেই গাছে একটা কাউয়ার বাসা ছিল। একটা না,ধাপে ধাপে অনেকগুলা কাউয়া বাসা করেছিল। কিন্তু আমার বেসুর গানের জ্বালায়,কোন কাউয়া শান্তিতে আন্ডা পাইরা বাচ্চা ফুটানোর আগেই বাচ্চা সহ পলাইতো!! একবার আমি কিছুদিনের জন্য বেড়াতে গেছিলাম। দিন বিশেক হবে। এরপর বাসায় এসে দেখি গাছে একটা কাউয়া বাসা বেধেছে। বাচ্চাও ফুটাইছে। তারপর আমি গান গাওয়া শুরু করলেই শালার কাউয়া আইসা ডানা ঝাপটাইতো।তার দুইদিন পর দেখি কাউয়ার বাসা খালি। মানে আমার বেসুর গলা সহ্য করতে না পেরে,শেষে বাচ্চা নিয়া কাউয়া মহাশয় পরায়ন করিয়াছে। এমন কি গলা আমার যার জন্য এমন হয়। কৌতুহল মেটানোর জন্য মোবাইলে আমি আমার পাঁচ মিনিটের গান রেকর্ড করে শুনলাম। দুই মিনিট শোনার পরই আমার অবস্থা "ছাইড়া দে মা,কাইন্দা বাচি" ..!! তারপর বুঝলাম কেন এমন হয়। এতদিন কত অবলা মাসুম প্রানীকেই না জুলুম করছি!! নাহ আর গান গাওয়া যাবে না। তারপর থেকে আর গান গাইনাই। এমন বিখ্যাত সুরেলা গলার অধিকারি আমি। আমার পরিচয়টা না দিলে কি হয়?? আমি শাওন।একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেমিস্ট্রি সিয়ে অনার্স করছি। এবার দ্বিতীয় বর্ষে!! আপনাতোত এটুকু পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাক!! দুইদিন পর: কলেজের নবিন বরন অনুষ্ঠানে গিয়ে একটা মেয়ের উপর ক্রাশ খেলাম। অসাধারন রুপবতী।অসম্ভব মায়াবী তার রুপ। টানা টানা চোখ।লম্বা চুল। মনে হয় নতুন। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা স্টেজে উঠলো। মাইকে নাম ঘোষনা করলো,"শোভা" আহ কি সুন্দর নাম।ঠিক চেহারার মতই। তারপর গান গাইলো,গলাটাও।সুন্দর। আমি দ্বিতীয় বার ক্রাশ খাইলাম। কি সুন্দর করে গাইতেছে। "আমার গানের মালা,আমি করবো কারে দান" আমি তখন বাংলা সিনেমার প্রাক্তন ভিলেন কাবিলার মত একটা ডায়লগ ছাড়লাম, -- সুন্দরী, তোর গানের মালা খানা আমাকে দে। আমি গলায় পরি। ভাগ্যিস কেউ শুনে নি। শুনলে দেখা যেত হঠাৎ করে কোন খেঁকশিয়ালের গর্ত থেকে দ্যা লুচু বয় নায়ক সাকিব খান বের হয়ে আসতো। তারপর থেকে শোভাকে ফলো করতাম। কিন্তু মেয়েটা কিছুই বুঝতো না। দেড় মাস ধরে ফলো করি অন্য মেয়ে হলে চার পাঁচ দিনেই বুঝে নিত। মেয়েটা আবার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নয়তো। ধুর কিসব ভাবতেছি। যাক দেরি করে বুঝলেও ওর পিছু ছাড়বো না। দেখি কি হয়। তারপর আরো তিনমাস ঘুরলাম।কিন্তু তাও বুঝলো না"! আরে কি আজব মেয়ে, পিছে পিছে একটা কুত্তা দুইদিন ঘুরলেও মানুষ বুঝতে পারে আর আমি সাড়ে চারমাস ধরে ঘুরি।কোন পাত্তা নাই। শেষে নিজে থেকেই কথা বললাম!! -- হায়,(আমি) -- আসসালামু আলাইকুম!!(শোভা) -- জ্বি,ওয়ালাইকুম আসসালাম। -- আপনি না মুসলিম সালাম না দিয়ে, কি সব হায় হ্যালো করতেছেন!! (আমি তো হা।ভাগ্যিস মুখে মাছি ঢুকে নাই।এ মেয়েতো না,আগুনের গোলা।আমি ) -- না মানে সরি। -- হুম। -- কেমন আছেন?? -- ভাল। -- আপনি কি চলার সময় আশেপাশে লক্ষ করেন না?? -- হু করিতো।খেয়াল রাখি কোনো চোর,ছ্যাচড়,লুইচ্চা পোলা ঘুরে।তাদের থেকে সাবধান থাকি!! --ভাবতেছি মনে মনে(ছি লজ্জা,আমারে ডিরেক্ট অপমান!! এটা কি মেয়ে নাকি বাঁশ) -- কিছু বললেন?? -- কই নাহ তো!! -- না বলে থাকলে ভাল।ভাল হন বুঝছেন। ভাল হতে পয়সা লাগে না। -- হু তা লাগে না।তবে ভালবাসা লাগে!! -- কি বললেন?? -- নাহ কিছু না!!(ভয় পেয়ে গেলাম) -- আবারো বলছি,ভাল হন। -- না!! -- কেন?? -- তাহলে না খেতে পেয়ে মারা যাবে!! -- কি আজব,আমিতো খেতে বারন করিনি। ভাল হতে বলেছি। -- আমিও সেটাই বলছি।কথায় বলে না।ভাল মানুষের ভাত নাই। তাহলে আমি যদি ভাল হই তাহলে তো ভাতের অভাবে না খেতে পেয়ে মারা যাবো!!! -- হাহাহা।আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না,বুঝেছি। -- হুম,বুঝলে ভাল। কথা বলা শেষে ও হাটা ধরলো, হঠাৎ চিৎকার, আমি তাকিয়ে দেখি ও দাড়িয়ে আছে,আর ওর সামনে একটা কুত্তা দাঁত খিচিয়ে দাড়িয়ে আছে। হায়রে নিয়তি!! সিনেমায় নায়ক গুন্ডা প্রতিপক্ষের হাত থেকে নায়িকাকে বাচায়। আর আমার প্রতিপক্ষ কিনা একটা নেড়ি কুত্তা!! যাই হোক। আমি গলা ছেড়ে কুত্তার উদ্দেশ্যে গান ধরলাম...!!! "ও...কুত্তা... তুই শুনতে কি পাস.... এ গান আমার... ও এগান আমার...." কুত্তা তো আমার বেসুর গলার গান শুনে বিরক্ত হয়ে কেউ...কেউ...করতে করতে উল্টা দৌড়... কুত্তাটা চলে যাবার পর শোভা আমার দিকে আসতেছে।তখন আমি বীরের বেশে বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছি।ভাবলাম থ্যাংস দিবে। তাই একটু ভাব নিলাম!! কিন্তু কাছে এসে,ব্যাগ থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে আমাকে দিলো!! -- এই নেন,একশো টাকা রাখেন!!(শোভা) -- একি তুমি আমাকে টাকা দিচ্ছো কেন?? জানোনা উপকারের প্রতিদান দিতে নেই। টাকা দিয়ে তুমি আমাকে কিন্তু ছোট করতেছো। আমি টাকার জন্য তোমার উপকার করিনি। (আমি) -- বারে...আপনাকে কখন বললাম উপকারের জন্য টাকা দিলাম!! -- তাহলে...?? -- হারপিক কেনার জন্য দিলাম!!... -- মানে?? কেন.!!? -- আপনার যা সুরেলা গলা।এতে হারপিক দিয়ে ওয়াস না করলে গলা ঠিক হবে না!! -- তোমাকে এত বড় উপকার করলাম।আর তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিলা। থাক আর বলতে হবে না!! বাই। -- আর। শুনেন। আমি কথা না বলে রাগ করে চলে আসলাম। পরদিন ওর সাথে আবার দেখা। আমি এড়িয়ে চলে যেতে চাইলাম। শোভা ডাকলো!! -- এই যে শাওন ভাই..!!! শুনেন!!(শোভা) -- ডাকলে কেন??(আমি) -- কালকের জন্য সরি। -- না না ঠিক আছে।গলাটা খুব বাজে তো। এজন্য ওই ধরনের কথা শুনতে হয়! এটা নতুন কিছু না। -- সরি বললাম তো।আসলে আমার ওভাবে মজা করাটা উচিত হয়নি। -- আচ্ছা ঠিক আছে। -- কি এখন এত ভাব তেখান কেন?? এতদিন তো ঠিকই আমার পিছনে ঘুরতেন। এখন যখন আমি কথা বলতে আসছি,ওনার ভাব বেরে গেছে!! -- কই নাহ ভাব বাড়েনিতো। -- বেড়েছে। আপনাকে বলেছিনা ভাল হতে পয়সা লাগে না..!!! ভাল হয়ে যান।বুঝলেন!! -- আমিও তো বললাম ভাল হতে পয়সা না ভালবাসা লাগে!! -- তা লাগবে নাকি?? লাগলে দিতে পারি!! -- মানে??(আশ্চর্য হয়ে) -- মানে কিছু না। প্রথম দিন থেকেই আপনাকে লক্ষ করেছি। বাট আপনার যা সাহস দেখলাম।সাড়ে চার মাসেও আগ বাড়িয়ে কথা বলেননি। তারপরো চাইতাম আপনিই আগ বাড়িয়ে কথা বলেন। অবশেষে বললেন!! চাইছিলাম কিছুদিন ঘুরিয়ে তারপর একসেপ্ট করবো। কিন্তৃ কালকের ঘটনার পর আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। আমি আগেই বলে দিলাম।যদিও প্রপোজ করেননি। -- হাহাহা,ভাল হও বুঝছো।ভাল হতে পয়সা লাগে না। -- ইসস আমার ডায়লগ আমাকে শুনায়। পয়সা না যা লাগে সেটা দাও। -- কি ভালবাসা?? -- হুম!! বুদ্ধু।চলো এখন প্রপোজ করো -- হাহা ভালবাসায় প্রপোজের দরকার হয়না।সবসময় দরকারও পরে না। মনের মিল যখন হয়ে গেছে তাহলে কি দরকার বোরিং তিনটা শব্দের একটা লাইন খরচ করার?? -- বাব্বাহ,বুদ্ধুটা দেখি ভালই কথা জানে!! -- হুম জানি। -- আচ্ছা চল,আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসো। আর এই আমার নাম্বার।রাতে কথা হবে। -- হুম চলো। হাটতেছি আর ভাবতেছি। জিবনটা অনেকসময় বাংলা সিনেমাকেও হার মানায়। যেই বেসুর গলা সবার বিরক্তির কারন। আজ সেই বেসুর গলাই আজ আমার প্রেমের সূচনার কারন। হয়তো প্রতিপক্ষ ছিল একটা কুত্তা।তাতে কি?? ওর বদৌলতে ভালবাসা তো পেয়েছি!!! বি.দ্র.: মোবাইল দিয়ে লিখি।এজন্য তাড়াতাড়ি টাইপের কারনে লেখায় ভুল হতেই পারে। ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।

No comments

Powered by Blogger.