Header Ads

বিচ্ছেদ


ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হয়। কিন্তু ভালোবাসা মানেই প্রেম নয়। ভালো লাগা থেকে বিয়ে হয়, আবার বিয়ের পরেও প্রেম হয়। স্বামী-স্ত্রীর প্রেম। আদি এবং অকৃত্রিম প্রেম। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু এমনই হয়।
মুসকান! নামটা সুন্দর না! মুসকান আমার প্রেমিকার নাম।
সময়টা ছিলো উদ্ভুত। আমি তখনও দেশের বাইরে। ওর সম্মতিতেই আমি পরবাসী হই। বিদেশের মাটি আমাকে কখনোই টানেনি। যদিও মানুষের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, পছন্দ, অপছন্দ, সিদ্ধান্ত সবসময় এক স্থানে স্থির থাকে না ----- বদলায়। আমার যতোটা না ইচ্ছে ছিলো তারচে' অনেক বেশি ইচ্ছে ছিলো মুসকানের। ওকে খুশি করতে, আমাদের ভবিষ্যৎ স্বচ্ছলতার কথা ভেবে আমি যেতে রাজী হই। কে চায় মনের মানুষকে ছেড়ে পরবাসী জীবনযাপন করতে!
হঠাৎ মুসকানের মা-বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। হঠাৎ মানে একেবারেই হঠাৎ -----বিনামেঘে বজ্রপাত আর কি!
মুসকান সেই বিয়েতে রাজী ছিলো না। রাজী হবে কেনো? ও যে আমাকে ভালোবাসে! ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে প্রেমিক-প্রেমিকার দু'জনেরই যে অপমান হবে। মানব জীবনে প্রেম যতোটা জরুরী, ঠিক ততোটাই জরুরী সঠিক মর্যাদায় প্রেমকে প্রতিষ্ঠিত করা।
আমাদের অধিকাংশ মা-বাবার মধ্যে উদ্ভুত একটা ভাবনা কাজ করে। মেয়ে যদি ছেলেকে নিজে পছন্দ করে বা ভালোবাসে, তাহলে মা-বাবা তাকে অযোগ্য মনে করেন। ছেলেদের অভিভাবকদের বেলায়ও এমন হয়। হ্যাঁ, ছেলে-মেয়েদের নিজ পছন্দের মানুষ ভুল হতেই পারে। কখনো কখনো হয়ও। স্বাভাবিক। আমরা মানুষকে চিনি তার কর্মে, ব্যাবহারে। মনে কি চলছে সে নিজে জানে। মনের মতলব কেউ যদি আড়াল করতে চায় তাহলে সে খুব সহজেই করতে পারে। কাজেই মানুষ চেনায় আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এমন কি মা-বাবাও না। তাঁরা ছেলের জন্য পাত্রী, মেয়ের জন্য যে পাত্র পছন্দ করেন তার সবটাই কি সঠিক হয়?
আমি যতোটুকু জানতাম মুসকানের মা-বাবা আমাকে পছন্দই করতেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অযোগ্য ভাবতেন তা জানতাম না। পছন্দ মানে তো যোগ্যতা নয়! হয়তো ঠিকই পছন্দ করতেন, কিন্তু মেয়ের জামাই হিসাবে যোগ্য ভাবতেন না। ভাবতেন না বলেই মেয়েকে বন্দী করে রাখেন। যাতে মুসকান কোনোভাবেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।
মুসকানের কথাবার্তা, চলাফেরা অনেক সাধারণ। দেখতেও বেশ মায়াবী, সরল। মায়ার আড়ালে অনেক সময় ছলনা থাকে। সরলতার আড়ালে থাকে জটিলতা। আর ওকে বন্দিনী বানিয়ে রাখা ওতো সহজ ছিলো না। চাচাতো বোনের সাহায্য নিয়ে সে ঠিকই পালিয়ে যায় বাড়ী থেকে এবং নিজের ভালোলাগার পাত্রকে বিয়ে করে। না, সে পাত্র আমি নই।
বিয়ের পরের দিনই আমার ভাবী ফোন দিয়ে সব আমাকে জানায়। মুসকান বিয়ে করেছে ইমনকে। আমি, মুসকান, ইমন একই পাড়ার ছেলে-মেয়ে। বহুদিন মুসকানের পিছনে ঘুরেছে ইমন, কিন্তু পাত্তা পায়নি। সঠিক সময়ে পাত্তা পেয়ে ইমনের পূর্বের পাত্তা না পাওয়ার দুঃখ হয়তো ঘুচে গেছে!
প্রাক্তন প্রেমিকা আমাকে ফোন দেয় বিয়ের সাতদিন পরে। খুব বিষণ্ণ কন্ঠে আমাকে জানায় তার অসহায়ত্বের কাহিনী। তার নাকি মাথা ঠিক ছিলো না। বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে না করবে। তাই নিরুপায় হয়ে ইমনকে বিয়ে করেছে।
আমাকে দেখতেও যতো বোকা মনে হয়, আসলে আমি ওতোটা বোকা নয়। ওর অসহায়ত্বের কাহিনী শুনে আমার কিছু বলার ছিলো না। তবু তো কিছু বলতে হয়!
তাই বলি ----- "যা করেছো ঠিকই করেছো। ওমন অবস্থায় তোমার কিবা আর করার ছিলো। যাই হোক, বাদ দাও ওসব। যা হবার হয়েছে। এখন জমিয়ে সংসার করো।"
আসল কাহিনী তো আমি জানি। মুসকান জেনে-বুঝে ঠান্ডা মাথায় আমার স্বপ্নগুলোকে খুন করেছে। ইমনের বাড়ী থেকে আমার বাড়ীর দুরত্ব মাত্র এক কিলো। ও ইচ্ছে করলেই আমাদের বাড়ীতে যেতে পারতো। আমাদের পরিবারের সবাই ওর আর আমার ব্যাপারটা জানে। আর আমি আমি তো ফিরতামই ছয়-সাত ঘন্টার মধ্যে। এই পরবাস থেকে মুসকানের সামনে উপস্থিত হতে কতো সময় লাগতো? বড়জোর ছয়-সাত ঘন্টা। মুখ্য সমস্যা ওটা নয়। মুখ্য সমস্যা হলো ------ ইচ্ছা। ইচ্ছে যদি আন্তরিক হয়, অসম্ভবও অনেক সময় সম্ভব হয়। আর এ তো সম্ভাব্য ছিলো। আসলে মুসকানের ইচ্ছে ছিলো না।
মুসকানের মতো অনেকে ছেলে-মেয়েই হয়তো আমাদের চারপাশে আছে। যারা প্রেমিক, প্রেমিকার স্বীকৃতি দিচ্ছে একজনকে, মনে মনে লালন করছে আরেকজনকে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এমনটি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। দিব্যি হাসিমুখে আপনার সাথে সংসার করছেন, আপনার বুকে মাথা রেখে নিজের ভালোবাসার গভীরতার প্রমাণ দিচ্ছেন। অথচ মনে মনে অন্য কাউকে লালন করছেন। সকলের অগোচরে তার কথা মনে করে হয়তো অশ্রুও ফেলছেন! হতেই পারে এমন। অন্তত হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। ভাগ্যিস মানুষ মানুষের মনের গভীরে যেতে পারে না। যদি পারতো তাহলে তো মহা সর্বনাশ হয়ে যেতো!
-----শিহাব আহমেদ (নোটবুক)

No comments

Powered by Blogger.